মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিদেশি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চলেছে, যারা তাদের দেশে অবস্থিত মার্কিন কোম্পানি ও নাগরিকদের ‘সেন্সর’ করার চেষ্টা করবে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রুবিও বুধবার এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
রুবিও বলেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রে সুরক্ষিত মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে, তাদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন নীতি গ্রহণ করা হবে।
মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায়ই অভিযোগ করা হয় যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণে মার্কিন কোম্পানিগুলোর নীতি, বিশেষ করে বিদেশি সরকারগুলোর প্ররোচনায়, এক ধরনের সেন্সরশিপ। রুবিও সতর্ক করে বলেন, বিদেশি সরকারগুলোর এমন পদক্ষেপ ‘অগ্রহণযোগ্য’।
এই প্রসঙ্গে রুবিও উল্লেখ করেন, কিছু বিদেশি কর্মকর্তা মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি এবং নাগরিকদের বিরুদ্ধে এমন কিছু সেন্সরশিপের পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা তাদের এখতিয়ারের বাইরে।
যদিও রুবিও নির্দিষ্ট কোনো বিদেশি কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করেননি, তবে এমন কিছু দেশের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে যাদের সরকার এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং ব্রাজিলের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ মূলত তাদের নাগরিকদের অধিকার রক্ষার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। রুবিও এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যারা আমেরিকানদের অধিকার খর্ব করতে চায়, তাদের আর আমাদের দেশে আসার সুযোগ দেওয়া হবে না।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘হয়তো লাতিন আমেরিকা, ইউরোপ বা অন্য কোথাও, যারা আমেরিকানদের অধিকার খর্ব করার চেষ্টা করে, তাদের প্রতি এতদিন যে নমনীয় আচরণ করা হয়েছে, সেই দিন শেষ।’
অন্যদিকে, এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রক্ষণশীলদের প্রতি সমর্থন বাড়ানোর একটি কৌশল। ইউরোপ এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে চরম ডানপন্থী দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন।
পররাষ্ট্র দপ্তর সম্প্রতি ইউরোপের মিত্রদের প্রতি একটি প্রবন্ধ শেয়ার করেছে, যেখানে ‘পশ্চিমের ঐতিহ্য’ ধারণ করা দেশগুলোর প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কিছু ইউরোপীয় সরকার তাদের নাগরিকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, বাকস্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকারের উপর বিধিনিষেধের সমালোচনা কেবল ডানপন্থীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ফিলিস্তিনপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠীও ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার নিন্দা করেছে।
তাদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো মূলত ফিলিস্তিনি পরিচয় প্রকাশের উপর বাধা সৃষ্টি করে।
মার্কিন প্রশাসনের এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উপর কঠোর হচ্ছে।
এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যক্রমে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে, যা প্রশাসনের উদ্বেগের কারণ। সম্প্রতি, মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া বক্তব্যে রুবিও তুরস্কের এক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী রুমেয়সা ওজতুর্কের গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন।
রুমেয়সা গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে একটি নিবন্ধে স্বাক্ষর করেছিলেন। এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
তাদের মতে, এটি ভিন্নমত দমনের একটি প্রচেষ্টা।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা