ইউক্রেন যুদ্ধ: সমঝোতা আলোচনার মাঝেও সামরিক আগ্রাসন অব্যাহত।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সত্ত্বেও ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান আরও জোরদার হচ্ছে। সম্প্রতি উভয়পক্ষ ১০০০ জন করে যুদ্ধবন্দীকে মুক্তি দিয়েছে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিনিময়।
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিতব্য আলোচনায় রাশিয়া এই প্রস্তাব দেয়। কিন্তু এর মধ্যেই রাশিয়া ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া তাদের হামলা আরও তীব্র করেছে। তারা ৯০০-এর বেশি কামikaze ড্রোন ও ৯২টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে, যার ফলে অন্তত ১৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
এর আগে ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার সামরিক অবকাঠামোতে প্রায় ৮০০ ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালায়।
জার্মানির পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে ১০০০ কিলোমিটার পাল্লার ‘টরস’ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভ্যাদেফুল মঙ্গলবার জানান, রাশিয়াকে কোনো সতর্কবার্তা ছাড়াই তারা এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতে পারে, যা ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা আরও বাড়াবে।
জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্চ সম্প্রতি বার্লিনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং কিয়েভকে নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে সহায়তা করার ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে, রাশিয়া জার্মানির এই পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, এমন সিদ্ধান্ত শান্তি আলোচনার পথে বাধা সৃষ্টি করবে।
রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকার আবেদন জানিয়েছে।
তবে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কারণে ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের’ সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। রাশিয়ার ড্রোনগুলো আবাসিক এলাকায় আঘাত হানছে, যা শহরের আকাশে ধ্বংসের চিত্র ফুটিয়ে তুলছে।
যদিও ইউক্রেনীয় বাহিনী তাদের ড্রোনগুলোর মধ্যে ৮২ শতাংশ ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে, যা তাদের স্বাভাবিক হারের চেয়ে কম।
সামরিক গোয়েন্দা সূত্র জানাচ্ছে, রাশিয়া ২ কিলোমিটারের বেশি উচ্চতায় ড্রোন ওড়াচ্ছে এবং ইউক্রেনের ইন্টারনেট ব্যবহার করে সেগুলোকে ইলেক্ট্রনিক হস্তক্ষেপ থেকে বাঁচাচ্ছে।
যুদ্ধক্ষেত্রেও রাশিয়া তাদের আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। তারা সুমি, খারকিভ ও দোনেৎস্ক অঞ্চলে ছয়টি বসতি দখলের দাবি করেছে।
পোক্রোভস্ক শহরের কাছে তারা তাদের আক্রমণের পরিধি বৃদ্ধি করছে, যা তাদের এ বছরের প্রধান লক্ষ্য।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক ভাষণে বলেন, রাশিয়া শান্তি বা আলোচনার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না, বরং নতুন করে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা করেছেন।
তিনি পুতিনকে ‘পাগল’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘আলোচনার মধ্যেই তিনি কিয়েভ ও অন্যান্য শহরে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছেন।’
যদিও ক্রেমলিনের মুখপাত্র পেসকভ ট্রাম্পের এই মন্তব্যের সমালোচনা করে এটিকে ‘মানসিক চাপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী জানিয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করেছে।
রাশিয়াও পাল্টা প্রস্তাব দেবে বলে জানা গেছে।
পোপ ফ্রান্সিস ভ্যাটিকানকে পরবর্তী আলোচনার স্থান হিসেবে প্রস্তাব দিলেও রাশিয়া চায় ইস্তাম্বুলে আলোচনা হোক।
রাশিয়া আলোচনার জন্য কিছু শর্ত দিয়েছে।
তাদের মতে, এই সংঘাতের মূল কারণগুলো দূর করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো—ইউক্রেনের রুশ ভাষা ব্যবহারকারীদের অধিকার এবং জেলেনস্কি সরকারের বৈধতা।
রাশিয়া মনে করে, ইউক্রেন সরকার রুশ ভাষা ব্যবহার নিষিদ্ধ করে তাদের অধিকার লঙ্ঘন করছে।
অন্যদিকে, পোল্যান্ডের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের ন্যাটো ও ইইউতে যোগদানের পক্ষে সমর্থন জানানো হয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভ্যাদেফুল বলেছেন, রাশিয়ার সাম্প্রতিক হামলার জবাবে এই নিষেধাজ্ঞাগুলো আরোপ করা হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়া থেকে তেল কেনা দেশগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা