পশ্চিম তীরে নতুন ২২টি বসতি স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল সরকার, যার মধ্যে কিছু অবৈধ বসতিকে বৈধতা দেওয়ার বিষয়টিও রয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে তারা জিউডিয়া ও সামারিয়া অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ আরো সুসংহত করতে পারবে। উল্লেখ্য, ইসরায়েলের ভাষায় জিউডিয়া ও সামারিয়া হচ্ছে অধিকৃত পশ্চিম তীরের নাম।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। গ্যালান্ট বলেন, এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পথে বাধা দেবে।
স্মোটরিচ, যিনি নিজেও অবৈধভাবে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বসবাস করেন এবং পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার পক্ষে, এই সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দল লিকুড পার্টি এই পদক্ষেপকে ‘একটি প্রজন্মের সিদ্ধান্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং জর্ডান নদীর পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলের অবস্থানকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছে।
বর্তমানে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের একশোর বেশি অবৈধ বসতি রয়েছে, যেখানে প্রায় পাঁচ লক্ষ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী বসবাস করে। এসব বসতি ছোট আউটপোস্ট থেকে শুরু করে আধুনিক অবকাঠামো সম্পন্ন বৃহৎ জনপদ পর্যন্ত বিস্তৃত।
পশ্চিম তীরে প্রায় ত্রিশ লক্ষ ফিলিস্তিনি বসবাস করে, যারা ইসরায়েলি সামরিক শাসনের অধীনে জীবন যাপন করছে। ফিলিস্তিনিরা এই অঞ্চলকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করে, যার মধ্যে পূর্ব জেরুজালেম ও গাজাও অন্তর্ভুক্ত।
ফিলিস্তিনের কর্মকর্তারা এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলি সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা সতর্ক করে বলেছে, অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের ফলে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ এই সিদ্ধান্তকে ‘বিপজ্জনক’ এবং ‘আন্তর্জাতিক বৈধতার প্রতি চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি ইসরায়েলকে এই অঞ্চলে অস্থিরতা তৈরির জন্য অভিযুক্ত করেছেন এবং বলেছেন, এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে।
হামাস নেতা সামি আবু জুহরি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা পিস নাও (Peace Now) বলেছে, এই পদক্ষেপ ‘পশ্চিম তীরের চিত্র নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করবে এবং দখলদারিত্বকে আরো দৃঢ় করবে’। তারা আরো বলেছে, ‘ইসরায়েল সরকার আর কোনো লুকোচুরি করছে না: অধিকৃত অঞ্চলগুলোর সংযুক্তিকরণ এবং বসতি সম্প্রসারণই তাদের প্রধান লক্ষ্য’।
আল জাজিরার প্রতিনিধি নিদা ইব্রাহিম জানিয়েছেন, ‘একটি সিদ্ধান্তে এত বিপুল সংখ্যক অবৈধ বসতি অনুমোদন করার ঘটনা নজিরবিহীন’। তিনি আরো বলেন, ‘ইসরায়েলি বসতিগুলো পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি জনপদগুলোকে কার্যত দমবন্ধ করে রাখছে।
নতুন বসতিগুলো ফাঁকা জায়গাগুলো পূরণ করবে, যা ভবিষ্যতে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনকে প্রায় অসম্ভব করে তুলবে। বিশ্ব যখন গাজায় নিবদ্ধ, ইসরায়েল সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তাদের দখলদারিত্বকে সুসংহত করছে।
এই ঘোষণা এমন একটি সময়ে এসেছে, যখন ফ্রান্স ও সৌদি আরবের নেতৃত্বে জাতিসংঘে একটি উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, যার লক্ষ্য হলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বিদলীয় সমাধান প্রক্রিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করা।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা