পাকিস্তানের অভিবাসন নীতি: তাড়াহুড়ো করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন আফগান শরণার্থীরা
পাকিস্তানের অভিবাসন নীতি কঠোর হওয়ার কারণে দেশটির বসবাসকারী আফগান শরণার্থীদের জীবন এখন চরম অনিশ্চয়তার মুখে। সম্প্রতি, কর্তৃপক্ষ তাদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে, যার ফলে কয়েক লক্ষ মানুষ দ্রুত সবকিছু গুছিয়ে জন্মভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোর জীবনযাত্রা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের (১৯৭৯) সময় থেকে, বহু আফগান পরিবার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়। এরপর কয়েক দশক ধরে তারা সেখানেই বসবাস করে আসছিল।
কিন্তু পাকিস্তানের বর্তমান সরকার অবৈধ অভিবাসন বিরোধী অভিযান শুরু করায়, তাদের জীবনযাত্রা নতুন করে সংকটে পড়েছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই, তাদের দ্রুত দেশ ছাড়তে হবে।
এর ফলস্বরূপ, অনেক আফগান পরিবারকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার নোটিশে সবকিছু ছেড়ে যেতে হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, ৪০ বছর বয়সী শের খান নামের এক ব্যক্তি জানান, তাকে মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যে বাড়ি খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের কারণে, অনেক পরিবার তাদের সমস্ত জিনিসপত্র ফেলে আসতে বাধ্য হয়েছে।
শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া এই মানুষগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
তারা জানেন না, কিভাবে নতুন করে জীবন শুরু করবেন।
আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী শহর তোরখামে শরণার্থীদের জন্য একটি শিবির স্থাপন করা হয়েছে।
সেখানে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোকে প্রাথমিক সহায়তা হিসেবে কিছু অর্থ ও খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
তবে, শরণার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায়, কর্তৃপক্ষের পক্ষে সবার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তোরখামের শরণার্থী শিবিরের পরিচালক মোলভি হাশিম মাইওয়ান্দওয়াল জানিয়েছেন, প্রতিদিন প্রায় ১৫০টি পরিবার এখানে আসছে।
ঈদ-উল-আযহার ছুটির পর এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা জঙ্গি হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আফগানদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করছে।
যদিও আফগান সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, শরণার্থীদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা হচ্ছে না এবং তাদের জোর করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে।
আফগান শরণার্থীদের এই সংকটকালে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।
তাদের মানবিক সহায়তা প্রদান করা এবং নতুন করে জীবন শুরু করতে সাহায্য করা এখন অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস