একটি নতুন ধারার অবকাশ যাপন: বিলাসবহুল খামার রিসোর্ট।
শহুরে জীবনের কোলাহল থেকে দূরে, প্রকৃতির কাছাকাছি, শান্ত পরিবেশে অবকাশ যাপনের ধারণা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। আর এই চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিশ্বজুড়ে তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক সব খামার রিসোর্ট।
যেখানে একদিকে যেমন প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায়, তেমনই পাওয়া যায় আধুনিক জীবনযাত্রার সব সুযোগ-সুবিধা। এই ধরনের রিসোর্টগুলো “এগ্রি-ট্যুরিজম” বা কৃষিভিত্তিক পর্যটনের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
বর্তমানে, যারা একটু ভিন্ন স্বাদের অবকাশ যাপন করতে চান, তাদের জন্য এই ধরনের রিসোর্টগুলো দারুণ এক আকর্ষণ। যেখানে একদিকে সবুজের সমারোহ, অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাবার ও অর্গানিক জীবনযাত্রার স্বাদ উপভোগ করা যায়।
আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সহ এই রিসোর্টগুলোতে অতিথিরা প্রকৃতির কাছাকাছি আসার সুযোগ পান, যা মানসিক শান্তির জন্য খুবই উপকারী।
যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসির গ্রেট স্মোকি পর্বতমালায় অবস্থিত ব্ল্যাকবেরি ফার্ম-এর কথা ভাবুন। এখানে আছে বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত বাগান, যেখানে ফল ও সবজির চাষ হয়। এছাড়াও আছে অশ্বারোহণ, মাছ ধরা এবং ১ লক্ষ ৭০ হাজার বোতল ওয়াইনের সংগ্রহ।
মেক্সিকোর সান হোসে দেল কাবোতে অবস্থিত ফ্লোরা ফার্মস-এর মত জায়গায় অতিথিরা থাকতে পারেন, যা একটি পারিবারিক খামার। এছাড়া, পুয়ের্তো রিকোর মনকায়ো-এর মত স্থানেও একই ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে, যেখানে খামার, গলফ কোর্স এবং আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান।
এই রিসোর্টগুলোতে থাকার খরচ প্রতি রাতের জন্য ১০০০ থেকে ৩০০০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এই ধরনের অবকাশ যাপনের ধারণা এখন বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। সেলিব্রিটিরাও এই ধারার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
উদাহরণস্বরূপ, মডেলিং জগতের পরিচিত মুখ বেলা ও জিজি হাদিদ প্রায়ই তাদের পরিবারের ৩২ একরের খামারে সময় কাটান। এছাড়া, অভিনেত্রী ব্রিয়ে লারসন এবং শাইলিন উডলি-র মত তারকারা প্রায়ই প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের মধ্যে প্রকৃতির কাছাকাছি আসার এই আগ্রহের কারণ হলো কর্মব্যস্ত জীবন থেকে মুক্তি এবং প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।
বিশ্বে এগ্রি-ট্যুরিজমের বাজার বাড়ছে, যা ২০১৯ সালে ৬৯.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ছিল, এবং ২০৩২ সাল নাগাদ তা ১৯7.৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
এই ধরনের রিসোর্টগুলো স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অনেক খামারি তাদের খামারে থাকার ব্যবস্থা করে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ তৈরি করছেন।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)-এর মতে, এই ধরনের পর্যটন “ভূমধ্যসাগরের গ্রামীণ অঞ্চলকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে” সহায়ক।
তবে, এই ধরনের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার পাশাপাশি, অনেকেই এখন প্রকৃতির কাছাকাছি, সাধারণ জীবনযাপন করতে পছন্দ করেন। ইতালির বোরগো দেই কন্টি রিসোর্টে আসা অতিথিরা মৌমাছি পালনকারীদের সাথে মধু সংগ্রহ করতে পারেন, ট্রাফল শিকারের প্রশিক্ষণ নিতে পারেন এবং জলপাই গাছের নিচে বসে দুপুরের খাবার উপভোগ করতে পারেন।
সব মিলিয়ে, এগ্রি-ট্যুরিজম এখন অবকাশ যাপনের একটি নতুন ধারা তৈরি করেছে। এটি একদিকে যেমন প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার সুযোগ করে দেয়, তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতেও সাহায্য করে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন