মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা খাতে অর্থ কাটছাঁট: সিনেটরদের তোপের মুখে এনআইএইচ প্রধান
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (এনআইএইচ)-এর পরিচালক ড. জে. ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার সিনেটে শুনানিতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত স্বাস্থ্য গবেষণা খাতে বাজেট কমানো এবং প্রশাসনিক পরিবর্তনের পরিকল্পনার বিষয়ে তাঁকে জেরা করা হয়। সিনেটররা এই সিদ্ধান্তের সম্ভাব্য ফল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, প্রস্তাবিত বাজেট কাটছাঁটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এজিং-এর (National Institute of Aging) ব্যয় প্রায় ৪০ শতাংশ কমানো এবং সামগ্রিকভাবে এনআইএইচের ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বাজেট থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ অর্থ হ্রাস করা। এই সিদ্ধান্তের ফলে চিকিৎসা গবেষণা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সিনেটর সুসান কলিন্স, যিনি মেইন অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেন, বয়স্ক নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিয়ে গভীর উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, এই ধরনের কাটছাঁট দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য গবেষণা খাতে বরাদ্দ সীমিত করার প্রস্তাবকেও তিনি ‘ত্রুটিপূর্ণ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এর ফলে, অনেক বিজ্ঞানী গবেষণার সুযোগের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমাতে পারেন, যা চিকিৎসা গবেষণা ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলোতেও বাধা সৃষ্টি করবে।
অন্যদিকে, উইসকনসিনের ডেমোক্র্যাট সিনেটর ট্যামি বাল্ডউইন প্রস্তাবিত ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাজেট কমানোর তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এর ফলে এনআইএইচ-এর অধীনে পরিচালিত ১৫,০০০-এর বেশি চিকিৎসা গবেষণা প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাল্ডউইনের মতে, এই প্রস্তাব ‘জৈব চিকিৎসা গবেষণাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করার’ শামিল।
শুনানিতে এনআইএইচ পরিচালক ভট্টাচার্যের বক্তব্য ছিল, তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে মিলে বাজেট নিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত এবং চিকিৎসা গবেষণার জন্য আরো নমনীয়ভাবে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে আগ্রহী। তবে, তিনি কিছু প্রশাসনিক পরিবর্তনের পক্ষে মত দিলেও, অনেক সিদ্ধান্তের দায় নিতে অস্বীকার করেন। বিশেষ করে, গবেষণার সুযোগ বাতিল করার বিষয়ে তিনি জানান, তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের আগেই এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
আরেক ডেমোক্র্যাট সিনেটর প্যাটি মারে জানতে চান, গণছাঁটাই এবং পুনর্গঠন পরিকল্পনার পর থেকে এনআইএইচ-এর কতজন কর্মী চাকরি ছেড়েছেন। সিনেটর জানান, তিনি এই বিষয়ে জানতে চাইলেও, এখনো পর্যন্ত কোনো সুস্পষ্ট উত্তর পাননি। মারে অভিযোগ করেন, গত কয়েক মাসে এই প্রশাসন এনআইএইচ থেকে প্রায় ৫,০০০ গুরুত্বপূর্ণ কর্মীকে বরখাস্ত করেছে বা তাঁদের সরে যেতে বাধ্য করেছে। এর পাশাপাশি, প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের অনুদান আটকে দেওয়া হয়েছে এবং প্রায় ২,৫০০ গবেষণা প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে, যেগুলোর মোট মূল্য প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার। এই গবেষণাগুলোর মধ্যে এইচআইভি এবং আলঝাইমার রোগের চিকিৎসাসংক্রান্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সিনেটর ব্রায়ান শ্যাজ, যিনি হাওয়াই রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেন, গবেষণার সুযোগ বাতিল করার বিষয়ে কঠোর সমালোচনা করেন। তাঁর মতে, বাতিল হওয়া প্রকল্পগুলো পুনরুদ্ধার করতে প্রায় ১৮ মাস সময় লাগতে পারে।
ড. ভট্টাচার্যের মতে, তিনি এই বিষয়ে একটি প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন এবং বাতিল হওয়া অনেক প্রকল্পের বিষয়ে আপিল গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি আশ্বাস দেন, এই আপিলগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে। তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি এই পদে এসেছি গবেষণা বন্ধ করার জন্য নয়, বরং আমেরিকান জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা নিশ্চিত করার জন্য।’
তথ্য সূত্র: সিএনএন