সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে, শরীরের গঠন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রবণতা দেখা যায়। সম্প্রতি, জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম TikTok একটি বিশেষ হ্যাশট্যাগ নিষিদ্ধ করেছে – #SkinnyTok।
এই পদক্ষেপের কারণ হলো, এই হ্যাশট্যাগটির মাধ্যমে অতিরিক্ত রোগা হওয়ার (extreme thinness) প্রবণতাকে উৎসাহিত করা হচ্ছিল, যা স্বাস্থ্য এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রকদের উদ্বেগের পরে TikTok এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেখানে এই ধরনের প্রবণতা প্রতিরোধের জন্য আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
#SkinnyTok মূলত একটি অনলাইন জগৎ ছিল, যেখানে রোগা হওয়ার বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা হতো। অনেকেই এটিকে স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার পরামর্শ হিসেবে দেখতেন, কিন্তু এর গভীরে ছিল খাদ্যাভ্যাস সংক্রান্ত গুরুতর সমস্যা।
“স্কিনি গার্ল হ্যাকস” (skinny girl hacks)-এর মতো বিষয়গুলো এখানে বেশ জনপ্রিয় ছিল, যেখানে কম ক্যালোরির খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হতো। এই ধরনের কনটেন্ট তরুণদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের মধ্যে একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতার জন্ম দেয়, যেখানে সবাই আরও রোগা হতে চাইত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের প্রবণতা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে খাদ্যাভ্যাসজনিত গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে। অতিরিক্ত রোগা হওয়ার চেষ্টা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব তৈরি করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
খাদ্য এবং পুষ্টিবিদদের মতে, শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের অভাব দেখা দিলে ক্লান্তি, দুর্বলতা, ঘুমের সমস্যা এবং পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে, এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে।
এই প্রবণতাগুলো আমাদের সমাজে প্রচলিত কিছু ধারণাকে আরও শক্তিশালী করে। যেমন – রোগা শরীর মানেই স্বাস্থ্যকর শরীর। বাস্তবে, স্বাস্থ্য কেবল শরীরের আকারের উপর নির্ভর করে না।
একজন মানুষ স্বাস্থ্যকর কিনা, তা নির্ভর করে তার জীবনযাত্রার ধরনের ওপর – সে কীভাবে খাচ্ছে, কতটা সক্রিয় থাকছে, পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে কিনা এবং মানসিক চাপ কীভাবে মোকাবেলা করছে।
চিকিৎসকরা মনে করেন, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চা খুবই জরুরি। খাবারের বিষয়ে কঠোর নিয়ম তৈরি না করে, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে সুস্থ থাকা সম্ভব।
কোনো বিষয়ে সন্দেহ হলে, একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অতিরিক্ত রোগা হওয়ার প্রবণতা থেকে দূরে থাকতে, শরীরের প্রতি যত্নশীল হতে এবং সুস্থ জীবনযাপনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
যদি আপনার মনে হয় যে আপনি এই ধরনের কোনো সমস্যায় ভুগছেন, তাহলে দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। মনে রাখবেন, সুস্থ জীবনই আসল, শরীরের গঠন নয়।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন।