ওয়াশিংটন ডিসি-র ন্যাশনাল গ্যালারি অফ আর্ট এবং স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্টরি – এই দুটি জগৎ যেন এতদিন ছিল দুই মেরুর বাসিন্দা। কিন্তু এবার তারা এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে, যেখানে শিল্পকলা আর প্রকৃতির এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটবে।
আসছে গ্রীষ্মে, এই দুই বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে “লিটল বিস্টস: আর্ট, ওয়ান্ডার, অ্যান্ড দ্য ন্যাচারাল ওয়ার্ল্ড” শীর্ষক এক অসাধারণ প্রদর্শনী হতে যাচ্ছে।
প্রদর্শনীর মূল বিষয় হল, ১৫০০ শতকের শুরু থেকে উত্তর ইউরোপের শিল্পীদের আঁকা জীবজন্তুদের ছবি, যা তারা তৈরি করেছিলেন কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে বিশাল সব স্তন্যপায়ী প্রাণী – সকলের ছবি অত্যন্ত যত্ন সহকারে ফুটিয়ে তুলেছিলেন।
সেই সময়ের শিল্পী জ্যাকব হফনাগেল, যিনি ছিলেন এই ধারার অগ্রদূতদের একজন। তাঁর ছবিতে একটি বিশেষত্ব ছিল, প্রতিটি ডিটেইল এত সূক্ষ্মভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যা সত্যিই বিস্ময়কর।
উদাহরণস্বরূপ, একটি ছবিতে দেখা যায়, একটি মধ্য আমেরিকান এলিফ্যান্ট বিটল, যা আকারে একটি শিশুর হাতের মুঠোর সমান, কিন্তু তার গায়ে রয়েছে ভয়ঙ্করদর্শন কাঁটা ও শিং। হফনাগেলের তুলির টানে এই পোকাটি যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। এই ধরনের ছবিগুলি তখনকার শিল্পকলার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
প্রদর্শনীতে শুধু ছবিই নয়, এর সাথে দেখা যাবে স্মিথসোনিয়ানের সংগ্রহ থেকে আসল জীবজন্তুর নমুনাও। যেমন, একটি টাশ্মানিয়ান ভ্যাসাম সিরামিকাম শামুকের ছবি রয়েছে, যা এতটাই সরু ও সূক্ষ্ম যে দেখলে কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যেতে হয়।
এর পাশে রাখা হয়েছে আসল শামুকটি, যা দর্শকদের মুগ্ধ করবে। এছাড়াও, হফনাগেলের আঁকা একটি সাউদার্ন হকার ড্রাগনফ্লাইয়ের ছবিও রয়েছে, যেখানে সোনারঙ ব্যবহার করা হয়েছে।
মনে হয় যেন এইমাত্র ছবিটি থেকে উড়ে যাবে ড্রাগনফ্লাইটি! আর এর সঙ্গেই রাখা হয়েছে আসল একটি ড্রাগনফ্লাই, যা স্মিথসোনিয়ানের বিশেষ সংরক্ষণাগার থেকে আনা হয়েছে।
আর্টের ইতিহাসে এই সময়টা ছিল এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সময়, যখন শিল্পীরা প্রকৃতিকে খুঁটিয়ে দেখার আগ্রহ থেকে ছবি আঁকতে শুরু করেন। ম্যাগনিফাইং গ্লাস ব্যবহার করে তারা প্রতিটি detail-কে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করতেন।
এই প্রদর্শনীতে, শিল্পকর্ম এবং আসল নমুনা পাশাপাশি রেখে দর্শকদের জন্য একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা তৈরি করা হয়েছে।
এই প্রদর্শনীর কেন্দ্রে রয়েছে হফনাগেলের আঁকা চারটি ডায়েরি-আকারের বই, যা “এয়ার, ওয়াটার, ফায়ার, এবং আর্থ” নামে পরিচিত। এই বইগুলোতে রয়েছে ২70টিরও বেশি হাতে আঁকা ছবি, যেখানে মাছি থেকে শুরু করে হাতি পর্যন্ত বিভিন্ন প্রাণীর ছবি রয়েছে।
ছবিগুলোতে detail-এর কাজ এতটাই নিখুঁত যে, আধুনিক 4K টিভির ছবিও হার মেনে যায়।
প্রদর্শনীতে ফ্লেমিশ শিল্পী ইয়ান ভ্যান ক্যাসেল দ্য এল্ডারের আঁকা “নোয়াহ’স ফ্যামিলি অ্যাসেম্বলিং দ্য অ্যানিম্যালস বিফোর দ্য আর্ক” ছবিটিও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ছবিতে দেখা যায়, নোয়ার পরিবার তাদের নৌকার সামনে বিভিন্ন প্রাণী একত্রিত করছে।
ছবিতে উট, কচ্ছপ, বানর, উটপাখি এমনকি উত্তর আমেরিকার টার্কিও দেখা যায়। তবে আকাশের দিকে তাকালে দেখা যায়, নানা ধরনের পাখি, জোড়ায় জোড়ায় উড়ছে, যেন তারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে চলেছে।
এই প্রদর্শশনীর মাধ্যমে, দর্শকেরা শিল্প ও বিজ্ঞানের এক অসাধারণ সঙ্গম প্রত্যক্ষ করতে পারবে। প্রদর্শনীটি সম্ভবত মে মাস থেকে ২রা নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক