প্যারিসের মর্গে: একসময় মানুষের মরদেহ দেখতে ভিড় করত পর্যটকেরা!

প্যারিসের এক অদ্ভুত ইতিহাস: মৃতদেহ প্রদর্শনের স্থান। আজ থেকে প্রায় দেড়শো বছর আগের প্যারিসে, জনসাধারণের কাছে একটি স্থান অত্যন্ত কৌতূহলের বিষয় ছিল – সেটি হলো ‘লা মর্গ’।

এটি ছিল শহরের অশনাক্ত মৃতদেহ রাখার স্থান, যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। এই মর্গটি কেবল একটি স্থান ছিল না, বরং এটি ছিল উনিশ শতকের প্যারিসের সমাজের একটি প্রতিচ্ছবি।

ফরাসি বিপ্লবের পর প্যারিসের জনসংখ্যা দ্রুত বাড়তে শুরু করে। শহরের এই দ্রুত পরিবর্তনে অনেক মানুষজন অজ্ঞাত অবস্থায় মারা যেতে শুরু করে।

তাদের পরিচয় জানার কোনো উপায় ছিল না। ফলস্বরূপ, শহরের কর্তৃপক্ষ একটি সমাধিস্থল তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, যেখানে এই মৃতদেহগুলো রাখা হবে।

১৮০৪ সালে প্যারিসের পুলিশ বিভাগের পাশে প্রথম মর্গটি খোলা হয়।

শহরের কেন্দ্রস্থলে নটরডেম ক্যাথেড্রালের কাছে ১৮৬৪ সালে নতুন করে এই মর্গটি তৈরি করা হয়। কাঁচের জানালা দিয়ে ঘেরা এই ভবনে মৃতদেহগুলো মার্বেল পাথরের উপর রাখা হতো।

দর্শনার্থীরা সহজেই তাদের দেখতে পেত। মৃতদেহের পচন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার জন্য তাদের উপর মাঝে মাঝে জল ছিটিয়ে দেওয়া হতো।

অনেক ক্ষেত্রে, মৃতদেহের পাশে তাদের পোশাক রাখা হতো, যা যেন এক ধরনের নীরব প্রদর্শনী।

আশ্চর্যজনকভাবে, এই মর্গটি খুব দ্রুত জনসাধারণের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এখানে ভিড় করত।

অনেকে এটিকে এক ধরনের বিনোদন হিসেবেও দেখত। সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিভিন্ন ঘটনার কারণে মানুষের মধ্যে মৃতদেহ সম্পর্কে আগ্রহ আরও বেড়ে যায়।

অল্প সময়ের মধ্যেই, এটি প্যারিসের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হয়ে ওঠে। লুভর জাদুঘর বা আইফেল টাওয়ারের থেকেও বেশি দর্শক আসত এখানে।

এই ঘটনা শুধু প্যারিসের ইতিহাসে নয়, বরং চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল।

প্যারিসের এই মর্গটি ফরেনসিক মেডিসিনের উন্নতিতে সহায়ক হয়েছিল। এর মাধ্যমে মৃতদেহের পরিচয় সনাক্তকরণ এবং অপরাধেরহস্য উদ্ঘাটনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।

প্যারিসের এই মডেল অনুসরণ করে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে, যেমন – নিউ ইয়র্ক, বার্লিন, এবং মেলবোর্নেও একই ধরনের মর্গ তৈরি করা হয়েছিল।

তবে, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে মানুষের রুচি বদলাতে শুরু করে। ১৯০৭ সালে প্যারিসের মর্গটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সময়ের সাথে সাথে, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটেছিল। যদিও মর্গটি বন্ধ হয়ে যায়, মানুষের মধ্যে কৌতূহল আজও একইভাবে বিদ্যমান।

বর্তমানে, অপরাধ ও মৃত্যুরহস্য সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনাগুলো সিনেমা, ওয়েব সিরিজ এবং সামাজিক মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়, যা এক প্রকারের বিনোদন হিসেবে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করে।

তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *