পাহাড় : প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য, বাড়ছে মৃত্যুর ঝুঁকি
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাহাড়ী অঞ্চলগুলোতে বাড়ছে বিপদ। বরফ গলা, ভূমিধস, এবং অতিবৃষ্টির মতো ঘটনাগুলো এখন প্রায়ই ঘটছে, যা মানুষের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পরিবর্তনগুলো আগে থেকে বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছে, ফলে বিপদ মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আল্পস পর্বতমালার ঘটনা
সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতমালার একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানকার ‘ক্লাইনেস নেসর্ন’ পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে ছিলেন কম্পিউটার প্রকৌশলী জান বুটেল।
তিনি লক্ষ্য করেন, পাহাড় থেকে আসা শব্দগুলো ক্রমশ বাড়ছে। এর কিছুক্ষণ পরেই ঘটে এক ভয়াবহ দৃশ্য।
কয়েক মিলিয়ন টন বরফ ও পাথর ধসে পরে, যা নিচের একটি গ্রামকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়।
আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফল
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনার মূল কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তন।
উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে পাহাড়ের বরফ গলছে, যা ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এছাড়া, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণেও পাহাড়গুলোতে ধসের ঘটনা বাড়ছে।
ইতালির মার্মোলাদা হিমবাহে ২০২১ সালে বরফ ধসে ১১ জন নিহত হয়। এছাড়া, অস্ট্রেলিয়ার ফ্লুচহর্ন পর্বতশৃঙ্গেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
হিমবাহ হ্রদের সৃষ্টি ও বিপদ
হিমবাহ গলতে শুরু করলে হ্রদের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় এই হ্রদগুলো ভেঙ্গে যায়, যার ফলে বন্যা ও ভূমিধসের মতো বিপর্যয় ঘটে।
ভারতে সিকিমের একটি ঘটনা এর উদাহরণ। সেখানে একটি হ্রদ ভেঙ্গে যাওয়ায় ভয়াবহ বন্যা হয়, যাতে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড়গুলোতে এমন পরিবর্তনগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হচ্ছে।
ইউনিভার্সিটি অফ হাল-এর একজন বিজ্ঞানী ডেভিড পেটলি জানিয়েছেন, বরফযুক্ত পাহাড়গুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি খুবই সংবেদনশীল।
তিনি আরও বলেন, “আমরা অনেক পাহাড়ে বড় ধরনের ভূমিধসের ঘটনা দেখছি।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ ওমবাদী জানিয়েছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে অতিবৃষ্টির ঘটনা ১৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ
এই সমস্যা মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোর তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলো পিছিয়ে আছে। তাদের পর্যাপ্ত সম্পদ ও প্রযুক্তি নেই, যা পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তোলে।
করণীয়
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে হলে বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা কমাতে হবে।
তবে কিছু পরিবর্তন এরই মধ্যে হয়ে গেছে, যা সহজে থামানো সম্ভব নয়। সুইজারল্যান্ডের একজন বিজ্ঞানী ম্যাথিয়াস হাস বলেছেন, “যদি আমরা ৫০ বছর আগে ব্যবস্থা নিতে পারতাম, তাহলে হয়তো অনেক ক্ষতি এড়ানো যেত।
কিন্তু আমরা তা করতে পারিনি।
বাংলাদেশের জন্য সতর্কতা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাহাড়গুলোতে বিপদ বাড়ছে, যা আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
কারণ, এতে শুধু ওই অঞ্চলের মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, বরং পুরো বিশ্বের পরিবেশের উপর এর প্রভাব পড়ছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন