যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে তেজি ভাব, বাণিজ্য আলোচনার প্রত্যাশা: বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য কতটুকু?
যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার, বিশেষ করে এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক, সম্প্রতি বেশ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। ফেব্রুয়ারির পর এই প্রথম সূচকটি সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছেছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা কিছুটা হ্রাস পাওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারের ইতিবাচক চিত্র।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর সম্ভাব্য কিছু প্রভাব পড়তে পারে।
শুক্রবার (গতকালের বাজার) দিন শেষে, এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক ১.০৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এর পাশাপাশি, ডাউ জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ (Dow) সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে ১.০৫ শতাংশ এবং প্রযুক্তি নির্ভর নাসডাক কম্পোজিট (Nasdaq Composite) সূচক ১.২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উত্থানের পেছনে অন্যতম কারণ হলো, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাণিজ্য নিয়ে কিছুটা নমনীয় হবেন—এমন প্রত্যাশা। আগামী সোমবার (আজ) লন্ডনে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি (মার্কিন সরকারের শীর্ষ আর্থিক কর্মকর্তা) স্কট বেসেন্ট, বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুতনিক এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার এই বৈঠকে অংশ নেবেন। চীনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই দেশের মধ্যে চলমান শুল্ক যুদ্ধের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান আসতে পারে।
তবে, বাজারের এই উত্থানের পেছনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল—যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারের শক্তিশালী চিত্র। মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ১ লক্ষ ৩৯ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, যা পূর্বাভাসের চেয়ে ভালো ফল। যদিও আগের মাসের তুলনায় এটি কিছুটা কম, তবুও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে এই সংখ্যাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে শুল্ক নীতির প্রভাব এখনো পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়নি। বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে এর ফলস্বরূপ ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
শেয়ার বাজারের এই ইতিবাচক প্রবণতার পাশাপাশি, বন্ডের সুদের হারও বেড়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফেডারেল রিজার্ভ (যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক)-এর সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা আপাতত কম।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির পরিবর্তন বাংলাদেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা বাংলাদেশ আমদানি করে থাকে। এছাড়া, বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা একটি প্রধান চালিকাশক্তি হওয়ায়, দেশটির বাজারের যেকোনো পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।
শেয়ার বাজারের এই উত্থান এবং বাণিজ্য আলোচনার সম্ভাবনা, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, বাণিজ্য যুদ্ধের চূড়ান্ত পরিণতি এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন