আতঙ্কের সৃষ্টি! পরমাণু ইস্যুতে চরম হুঁশিয়ারি ইরানের, বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি: জাতিসংঘের উদ্বেগের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি

আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর পরিচালনা পর্ষদ ইরানের বিরুদ্ধে পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় তেহরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম আরও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে আলোচনার প্রেক্ষাপটে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

খবর সূত্রে জানা যায়, আগামী রবিবার ওমানের রাজধানী মাস্কাটে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনা পুনরায় শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত আইএইএ বোর্ডের বৈঠকে এই প্রস্তাবের পক্ষে ১৯টি ভোট পড়ে, বিপক্ষে ছিল ৩টি এবং ১১টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। জাতিসংঘের এই সংস্থার পক্ষ থেকে এর আগে ইরানকে সহযোগিতা না করার বিষয়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।

তবে, বৃহস্পতিবারের এই পদক্ষেপকে গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি উত্থাপনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

আইএইএ-এর একটি প্রতিবেদনে ইরানের বিরুদ্ধে তাদের পারমাণবিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, দেশটির গোপন স্থানে পাওয়া ইউরেনিয়াম কণা এবং অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি মাত্রায় ইউরেনিয়াম মজুত করার মতো বিষয়গুলো।

ইরান অবশ্য এই অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে বর্ণনা করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানির উত্থাপিত প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা করে তেহরান বলেছে, তাদের “জবাব দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই”।

একজন সিনিয়র ইরানি কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইরান প্রতিশোধমূলক পারমাণবিক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।

এর মধ্যে আইএইএ-এর সঙ্গে সহযোগিতা কমানো, কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা, অত্যাধুনিক ও নতুন প্রজন্মের সেন্ট্রিফিউজ সক্রিয় করা এবং ইস্ফাহান ফ্যাসিলিটি থেকে নজরদারি ক্যামেরা অপসারণের মতো পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

অন্যদিকে, গত সপ্তাহে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হোসেন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান সতর্ক করে বলেন, “ইউরোপ যদি আবারও কোনো বড় কৌশলগত ভুল করে, তবে ইরান এর কঠোর জবাব দেবে”।

২০২২ সালে আইএইএ-এর পক্ষ থেকে ইরানের কিছু গোপন স্থানে ইউরেনিয়াম কণা পাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। এরপর ইরান সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে নজরদারি ক্যামেরা সরিয়ে নেয়, যার ফলে তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম সম্পর্কে আপ-টু-ডেট তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

আলোচনার পূর্ব মুহূর্তে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

একইসাথে, জেরুজালেমের মার্কিন দূতাবাস কর্মীদের জন্য তেল আবিব, জেরুজালেম এবং বেরশেভার বাইরে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে একটি নতুন চুক্তি করার বিষয়ে তাঁর আত্মবিশ্বাসের অভাবের কথা জানিয়েছেন। তাঁর মতে, ইরান সম্ভবত আলোচনা বিলম্বিত করছে।

এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক মহল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং এর আঞ্চলিক প্রভাবের ওপর গভীর নজর রাখছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *