ট্রাম্পের শুল্ক: আপাতত বহাল, তবে গ্রীষ্মেই সমাধান?

ট্রাম্পের শুল্ক এখনই বহাল থাকছে। তবে দেশটির একটি আপিল আদালত জানিয়েছে, তারা এই বিষয়ে দ্রুত শুনানির ব্যবস্থা করবে এবং গ্রীষ্মকালেই এর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা হবে।

মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) ফেডারেল আপিল আদালত এই রায় দেন। খবরটি জানিয়েছে সিএনএনসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো।

আদালতের এই সিদ্ধান্ত আসে মূলত, ট্রাম্প প্রশাসনের করা আপিলের পর। এর আগে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত এক রায়ে জানায়, ট্রাম্প দেশের বাইরে থেকে পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে তার ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছেন। জাতীয় জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি এই শুল্ক আরোপ করেছিলেন।

আদালতের দেওয়া রায়ে বলা হয়েছে, উভয় পক্ষই তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে। সব দিক বিবেচনা করে আদালত মনে করছে, এই মুহূর্তে শুল্ক বহাল রাখা উচিত।

আদালত আরও জানিয়েছে, আপিলের শুনানির জন্য মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হবে। গ্রীষ্মের মধ্যেই এই মামলার শুনানি শেষ করারও সম্ভাবনা রয়েছে। আদালতের বিচারকদের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দ্রুততার সঙ্গে এই মামলার শুনানিতে বসবে।

মামলার সঙ্গে জড়িত এক আইনজীবী এই সিদ্ধান্তকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, দ্রুত শুনানির মাধ্যমে একটি স্থায়ী সমাধান পাওয়া যেতে পারে।

অন্যদিকে, হোয়াইট হাউজ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন সংবিধান ও কংগ্রেস প্রদত্ত ক্ষমতা ব্যবহার করে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি এবং মাদক পাচার রোধ করতে চাইছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক সামাজিক মাধ্যমে এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে অন্যান্য দেশ থেকে সুরক্ষার জন্য শুল্ক আরোপ করার অনুমতি দিয়েছে ফেডারেল আপিল আদালত। এটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জয়।’

তবে, আদালতের এই রায়ের কারণে অ্যালুমিনিয়াম, ইস্পাত, গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশের মতো বিভিন্ন পণ্যের ওপর আগে থেকে আরোপিত শুল্কের কোনো পরিবর্তন হবে না। কারণ, এই শুল্কগুলো ‘ট্রেড এক্সপ্যানশন অ্যাক্ট’-এর ২৩২ নম্বর ধারার অধীনে আরোপ করা হয়েছিল, যা ট্রাম্পের বৃহত্তর বাণিজ্য নীতির থেকে ভিন্ন। এই ধারায় কোনো প্রেসিডেন্টকে জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকির কারণ দেখা দিলে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মামলার চূড়ান্ত ফল যাই হোক না কেন, প্রশাসনের হাতে এখনো শুল্ক আরোপের মতো আরও কিছু উপায় রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (International Emergency Economic Powers Act বা IEEPA)-এর অধীনেও প্রেসিডেন্টের শুল্ক আরোপের ক্ষমতা রয়েছে। ট্রাম্প এই আইন ব্যবহার করে মেক্সিকো, কানাডা ও চীনের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের চেষ্টা করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অভিবাসন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ফেনটানিল প্রবেশে সহায়তা করার অভিযোগ ছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, যদি IEEPA সম্পর্কিত শুল্কগুলো প্রত্যাহার করা হয়, তাহলে বর্তমানে বিদ্যমান ১৩-১৪ শতাংশ কার্যকর শুল্কের হার কমে ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে। যদিও এই হার এখনো ২০২৪ সালের তুলনায় দ্বিগুণ।

তবে, এই মামলার কারণে ব্যবসায়ীরা ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে শুল্কের হার পরিবর্তন করেছেন, যা ব্যবসায়ীদের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ। ব্যবসায়ীরা বুঝতে পারছেন না, আগামী দিনগুলোতে কোন পণ্যের দাম কত হবে।

আগে ট্রাম্প ব্যবসায়ীদের শুল্ক এড়াতে উৎপাদন প্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ এবং এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *