মিডিয়া সন্ত্রাসের সেই গল্প, ট্রাম্পের আমেরিকাতেও আতঙ্ক!

শিরোনাম: “শুভ রাত্রি, শুভকামনা” নাটক: অতীতের প্রতিচ্ছবি, বর্তমানের প্রতিধ্বনি? – ট্রাম্পের আমেরিকায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন

বিগত কয়েক দশক ধরে, সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত। জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া এবং সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।

কিন্তু যখন রাজনৈতিক ক্ষমতা সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তখন কী হয়? সম্প্রতি, “গুড নাইট, অ্যান্ড গুড লাক” (শুভ রাত্রি, শুভকামনা) নামের একটি ব্রডওয়ে নাটক আবারও আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যা ১৯৫০-এর দশকের আমেরিকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের অধিকারের লড়াইকে তুলে ধরে।

নাটকটি যেন বর্তমান সময়ের প্রতিচ্ছবি, যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে সংবাদমাধ্যমের উপর চাপ সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে।

নাটকটি মূলত বিখ্যাত সাংবাদিক এডওয়ার্ড আর. মুরোর চরিত্রকে কেন্দ্র করে নির্মিত। মুরো ছিলেন সিবিএস নিউজের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, যিনি তার নির্ভীক এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য পরিচিত ছিলেন।

সেই সময়ে, আমেরিকার ‘শীতল যুদ্ধ’-এর প্রেক্ষাপটে কমিউনিস্ট ভীতি ছড়িয়ে পড়েছিল। সিনেটর জোসেফ ম্যাকার্থি’র নেতৃত্বে তথাকথিত কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে ‘শিকার অভিযান’ শুরু হয়, যা ‘ম্যাকার্থিবাদ’ নামে পরিচিত।

এই সময়ে, বহু নিরীহ মানুষকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় এবং তাদের কর্মজীবন ধ্বংস হয়ে যায়। মুরো এবং তার দল এই অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।

নাটকে মুরো’র চরিত্রে অভিনেতা জর্জ ক্লুনি’র অভিনয় বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। ক্লুনি নিজেও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিনি মনে করেন, ম্যাকার্থিবাদ এবং ট্রাম্পের সময়ে সংবাদমাধ্যমের উপর চাপ সৃষ্টির মধ্যে গভীর মিল রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য এবং আইনি পদক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে, যা সংবাদ কর্মীদের মধ্যে ভীতি তৈরি করেছে।

ম্যাকার্থিবাদ এবং ট্রাম্পের সময়ের মধ্যে মিলগুলো সত্যিই গভীর। উভয় ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক ক্ষমতা সংবাদমাধ্যমকে তাদের সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য নিশানা করেছে।

মিডিয়াকে ভয় দেখানোর জন্য তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে আক্রমণাত্মক মন্তব্য, মিথ্যা অভিযোগ এবং অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা।

“গুড নাইট, অ্যান্ড গুড লাক” নাটকটি শুধু একটি ঐতিহাসিক ঘটনার পুনর্নির্মাণ নয়, বরং এটি বর্তমান সময়ের জন্য একটি সতর্কবার্তা।

এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, গণতন্ত্রের জন্য সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কতটা জরুরি। সাংবাদিকদের নির্ভীক এবং নিরপেক্ষ থাকতে হবে, সত্যকে তুলে ধরতে হবে, এবং কোনো প্রকার চাপের কাছে নতি স্বীকার করা যাবে না।

তবে, এই নাটকটি বাংলাদেশে কতটা প্রাসঙ্গিক? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এখানেও মাঝে মাঝে সাংবাদিকদের উপর চাপ সৃষ্টি এবং হয়রানির অভিযোগ শোনা যায়। তাই, “গুড নাইট, অ্যান্ড গুড লাক” নাটকের গল্পটি বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

এটি তাদের জানতে সাহায্য করবে যে, কীভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে খর্ব করতে চায় এবং এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো কতটা জরুরি।

বর্তমানে, অনেক দেশে খবর পরিবেশনের ক্ষেত্রে কর্পোরেট স্বার্থ এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা হুমকির মুখে। তাই, “গুড নাইট, অ্যান্ড গুড লাক” নাটকটি কেবল একটি বিনোদনমূলক সৃষ্টি নয়, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাও বটে।

এটি আমাদের সবার জন্য একটি সুযোগ, যেখানে আমরা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে পারি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *