যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত সংবাদ উপস্থাপক স্কট পেলি, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, কোনো দেশের সাংবাদিকতা যদি নীরব হয়ে যায়, তাহলে সেই দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে।
সিবিএস নিউজের এই অভিজ্ঞ সাংবাদিকের ভাষ্যে, বর্তমানে আমেরিকায় ভয়ের একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যেখানে অনেকেই মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ, তাঁদের আশঙ্কা, সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে পারে। তিনি মনে করেন, এই ধরনের পরিস্থিতি আমেরিকার আদর্শের পরিপন্থী।
পেলির এই বক্তব্য এসেছে একটি ব্রডওয়ে নাটকের প্রেক্ষাপটে। ‘গুড নাইট, অ্যান্ড গুড লাক’ নামের এই নাটকটি ১৯৫৪ সালের ঘটনা নিয়ে তৈরি, যেখানে সাংবাদিক এডওয়ার্ড আর. মারোর সিনেটর জোসেফ ম্যাককার্থির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারের সাহসী ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। ম্যাককার্থির আমলে কমিউনিস্ট সন্দেহে মানুষজনকে হেনস্থা করা হতো। অনেকে মনে করেন, সেই সময়ের পরিস্থিতি এবং বর্তমানের মধ্যে মিল রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সময়েও সংবাদমাধ্যমের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
পেলির মতে, ভয়ের এই পরিবেশ রুখতে সাহস নিয়ে কথা বলাটা জরুরি। তিনি বলেন, “যদি আপনারা কথা বলতে সাহস রাখেন, তাহলে আমরা রক্ষা পাবো। আর যদি চুপ করে যান, তাহলে দেশের সমূহ বিপদ।”
সাক্ষাৎকারে, সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পেলি দৃঢ়ভাবে বলেন, “গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে সাংবাদিকতা অপরিহার্য। এটা ছাড়া গণতন্ত্র কল্পনা করা যায় না।”
ডোনাল্ড ট্রাম্প সিবিএস নিউজের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। কমলা হ্যারিসকে নিয়ে করা ‘সিক্সটি মিনিটস’-এর একটি সাক্ষাৎকারের জেরে এই মামলা হয়। সিবিএস নিউজের কর্মীরা এই মামলার মোকাবিলা করতে চাইছেন। তবে, জানা গেছে, সিবিএস-এর মূল সংস্থা প্যারামাউন্ট গ্লোবাল, ট্রাম্পের সঙ্গে একটি আপোস করার চেষ্টা করছে। অনেকের ধারণা, এর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন আদায় করা যেতে পারে।
পেলির মতে, আপস হলে তা সিবিএস, প্যারামাউন্ট এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সুনামকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি, হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যারা চুক্তি করেছে, তাদের অনেকেই এখন অনুশোচনা করছেন। এটা তাদের ভালো কাজ হয়নি।”
সম্প্রতি, ওয়েক ফরেস্ট ইউনিভার্সিটিতে দেওয়া এক বক্তৃতায় পেলি সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, “কেন বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ? কারণ, অজ্ঞতা ক্ষমতাকে সাহায্য করে।” তিনি আরও যোগ করেন, ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা ইতিহাসকে নিজেদের মতো করে লেখেন।
পেলির মতে, বাকস্বাধীনতা আমেরিকায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি বলেন, সরকারে সঙ্গে আপনি একমত হতে পারেন, আবার দ্বিমতও পোষণ করতে পারেন। কিন্তু, আপনার কথা বলার অধিকার অবশ্যই থাকতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন