বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ও বিচ বয়েজ ব্যান্ডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান উইলসন আর নেই। বুধবার ৮২ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সঙ্গীতের জগতে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
উইলসন ছিলেন বিচ বয়েজের সৃজনশীল শক্তির মূল কেন্দ্রবিন্দু, যিনি সুরের জাদুকরী জগৎ তৈরি করেছেন। তাঁর সুরেলা কণ্ঠ, সুরের মাধুর্য এবং অর্কেস্ট্রাল বিন্যাস আজও সঙ্গীতপ্রেমীদের মুগ্ধ করে।
ব্রায়ান উইলসনের জন্ম ১৯৪২ সালের ২০ জুন, ক্যালিফোর্নিয়ার ইনগেলউডে। সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা তাঁর ছোটবেলা থেকেই।
তবে শৈশবে বাবার নির্যাতন ও মানসিক কষ্টের সঙ্গেও তাঁকে লড়তে হয়েছে। এই প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, তিনি সঙ্গীতের মাধ্যমে নিজের জগৎ গড়ে তোলেন।
১৯৬০ এর দশকে বিচ বয়েজের মাধ্যমে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। “সার্ফার গার্ল” ও “সার্ফিন” এর মতো গানগুলো তাঁকে এনে দেয় আকাশছোঁয়া খ্যাতি।
তবে খ্যাতির শিখরে পৌঁছানোর এই পথ খুব মসৃণ ছিল না। অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং ব্যক্তিগত সমস্যাগুলোর কারণে তিনি মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন।
১৯৬৪ সালের শেষের দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং একসময় কনসার্ট করা বন্ধ করে দেন। এর পরবর্তী এক দশক তিনি স্টুডিওতে কাজ করা শুরু করেন।
তাঁর জীবনের এই কঠিন সময়ে, তিনি মাদকাসক্তি ও সিজোফ্রেনিয়া-এর মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার শিকার হন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর এই মানসিক অসুস্থতার কারণ ছিল শৈশবের আঘাত, যা তিনি সারাজীবন বয়ে বেড়িয়েছেন।
উইলসন তাঁর সঙ্গীতজীবনকে নতুন রূপে সাজিয়ে তোলেন যখন তিনি “পেট সাউন্ডস” অ্যালবাম তৈরি করেন। এই অ্যালবামটি সঙ্গীতের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।
পরবর্তীতে, তিনি “এসএমাইল” নামের একটি অসম্পূর্ণ কাজ পুনরায় শুরু করেন এবং তা সম্পন্ন করেন। তাঁর এই কাজটি ছিল সঙ্গীতের প্রতি তাঁর ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
২০২৩ সালে রোলিং স্টোন ম্যাগাজিন ব্রায়ান উইলসনকে সর্বকালের সেরা ২০০ জন গায়কের মধ্যে একজন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সঙ্গীতের প্রতি তাঁর এই অসামান্য অবদানের জন্য তিনি দুইবার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
ব্যক্তিগত জীবনেও ব্রায়ান উইলসনের ছিল অনেক চড়াই-উতরাই। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করেন।
১৯৮৬ সালে তিনি মেলিন্ডা লেডবেটারের সঙ্গে পরিচিত হন এবং ১৯৯৫ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। মেলিন্ডা উইলসনের জীবনের কঠিন সময়ে তাঁর পাশে ছিলেন এবং তাঁকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছিলেন।
গত বছর মেলিন্ডার মৃত্যুর পর, ব্রায়ান উইলসনকে আইনি অভিভাবকত্বের অধীনে রাখা হয়।
ব্রায়ান উইলসনের চলে যাওয়া সঙ্গীতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর গানগুলো মানুষের হৃদয়ে গেঁথে থাকবে চিরকাল। তাঁর সৃষ্টিশীলতা ও সঙ্গীতের প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন