বিদ্যুৎ সংকটের অজুহাত! ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে চালু কয়লা কেন্দ্র, বাড়ছে খরচ?

যুক্তরাষ্ট্রের একটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর ফলে ১৫টি রাজ্যের গ্রাহকদের কয়েক কোটি ডলার বেশি খরচ করতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের একটি পুরনো কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করার কথা ছিল। কিন্তু সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত কেন্দ্রটি চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছে। দেশটির জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস রাইট এই নির্দেশ দেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই সিদ্ধান্তের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ১৫টি রাজ্যের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কয়েক কোটি ডলার অতিরিক্ত খরচ হবে।

মিশিগান অঙ্গরাজ্যের কর্মকর্তারা এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয়েছেন। কারণ, এর আগে ২০২২ সালে কেন্দ্রটি বন্ধ করার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। মিশিগান পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রধান ড্যান স্ক্রিপস বলেন, “গ্রিড অপারেটর, বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা কিংবা রাজ্য সরকার কেউই এমনটা চায়নি। এমনকি, জ্বালানি বিভাগের সঙ্গে আমাদের কোনো আলোচনাও হয়নি।”

জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস রাইটের মতে, গ্রীষ্মকালে কয়লা, গ্যাস এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভাবে মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তবে, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিক ‘কনজিউমার্স এনার্জি’ জানিয়েছে, তারা বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে একটি নতুন গ্যাস-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ৬০ বছরের বেশি পুরনো এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু রাখতে অনেক বেশি খরচ হবে। ড্যান স্ক্রিপস জানিয়েছেন, এই অতিরিক্ত খরচ কয়েক কোটি ডলার থেকে শুরু করে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। এর ফলে গ্রাহকদের বিদ্যুতের বিল বাড়বে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

জ্বালানি বিভাগের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করার ফলে গ্রিড ব্যবস্থায় নির্ভরযোগ্যতা কমে যেতে পারে। তবে, জরুরি অবস্থা জারির আগে জ্বালানি বিভাগ কোনো খরচ বিশ্লেষণ করেছে কিনা, তা এখনো জানা যায়নি। এমনকি, কোম্পানিটির বিকল্প ব্যবস্থা সম্পর্কেও তারা অবগত ছিল কিনা, সে বিষয়েও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে, মিশিগানের অ্যাটর্নি জেনারেল ডানাessel ফেডারেল সরকারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন। তিনি বলেন, জরুরি অবস্থা জারির এই ঘটনা খুবই বিরল এবং সাধারণত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এমনটা করা হয়। তিনি আরও জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু রাখার কারণে বিদ্যুতের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।

বর্তমানে অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা তাদের পুরনো কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে। কারণ, এগুলো চালানো এখন বেশ ব্যয়বহুল। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে একটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গড় বয়স ছিল ৪৫ বছর।

অন্যদিকে, টেক্সাসের মতো রাজ্যগুলোতে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ছে। সেখানকার বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো বায়ু ও সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ব্যাটারি স্টোরেজে বিনিয়োগ করছে। টেক্সাসের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ডগ লেউইন জানান, গত চার বছরে টেক্সাসের গ্রিডে যুক্ত হওয়া বিদ্যুতের ৯২ শতাংশই এসেছে বায়ু, সৌর এবং স্টোরেজ ব্যবস্থা থেকে। এর ফলে বিদ্যুতের দাম স্থিতিশীল রয়েছে এবং চাহিদা পূরণ করা সহজ হচ্ছে।

তবে, জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস রাইট নবায়নযোগ্য শক্তিকে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে নির্ভরযোগ্য মনে করেন না। তিনি এক বক্তব্যে বলেছিলেন, বায়ু, সৌর এবং ব্যাটারি প্রযুক্তি কখনোই প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হতে পারে না।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *