বদলে যাওয়া ক্যালিফোর্নিয়ার কাস্ট্রো: এলজিবিটি সম্প্রদায়ের ভালোবাসার ঠিকানা!

ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোর ‘ক্যাস্ট্রো’ এলাকা, যা একসময় পরিচিত ছিল ‘ইউরেকা ভ্যালি’ নামে, বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের এলজিবিটি সম্প্রদায়ের কাছে এক বিশেষ স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৬০-এর দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন ও হিপ্পি সংস্কৃতির উন্মেষের সময়ে, এই এলাকাটি তরুণ প্রজন্মের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

পরবর্তীতে, এটি ‘গে’ সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে, যেখানে সমকামীদের অবাধ বিচরণ ছিল।

ক্যাস্ট্রো এলাকার এই পরিচিতি লাভের পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন হার্ভে মিল্ক। ১৯৭২ সালে নিউইয়র্ক থেকে সান ফ্রান্সিসকোতে এসে তিনি ক্যাস্ট্রো স্ট্রিটে একটি ক্যামেরা শপ খোলেন।

পরবর্তীতে তিনি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হন এবং এলজিবিটি অধিকার আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। ১৯৭৭ সালে তিনি সান ফ্রান্সিসকোর সুপারভাইজার বোর্ডে নির্বাচিত হন, যা ছিল যুক্তরাষ্ট্রে কোনো প্রকাশ্যে সমকামী ব্যক্তির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

মিল্ক এলজিবিটি সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

হার্ভে মিল্কের রাজনৈতিক জীবন এবং ক্যাস্ট্রো এলাকার এলজিবিটি সম্প্রদায়ের উত্থান একই সূত্রে গাঁথা। মিল্ককে ‘ক্যাস্ট্রো স্ট্রিটের মেয়র’ হিসেবেও অভিহিত করা হতো।

তাঁর নেতৃত্ব এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে নতুন আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৮ সালে এক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে তিনি নিহত হন।

তাঁর এই মৃত্যু এলজিবিটি অধিকার আন্দোলনের জন্য এক বিরাট ক্ষতি ছিল, তবে একইসঙ্গে তাঁকে এই আন্দোলনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করে।

হার্ভে মিল্কের মৃত্যুর পর, তাঁর স্মৃতি আজও অম্লান। তাঁর সম্মানে সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি টার্মিনালের নামকরণ করা হয়েছে, এমনকি একটি ইউএস নেভি জাহাজেরও নামকরণ করা হয়েছে তাঁর নামে।

বর্তমানে, ক্যাস্ট্রো এলাকাটি এলজিবিটি সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত।

তবে, সময়ের সাথে সাথে ক্যাস্ট্রো এলাকার চিত্রও পরিবর্তিত হয়েছে। এখানকার জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেক এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষ এলাকাটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

তা সত্ত্বেও, ক্যাস্ট্রো তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব এখনো ধরে রেখেছে এবং এলজিবিটি সম্প্রদায়ের জন্য একটি আশ্রয়স্থল হিসেবে টিকে আছে। বর্তমানে, এখানকার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও এলজিবিটি সম্প্রদায়ের ইতিহাসকে ধরে রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ, এখানে একটি জাদুঘর তৈরি করা হয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে আসা পর্যটকদের কাছে ক্যাস্ট্রোর ইতিহাস তুলে ধরে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *