লেসলি লোকো: স্থাপত্যকে নতুন দিশা, আফ্রিকার ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে এক অগ্রণী নারী।
স্থাপত্য জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনের স্বপ্নে বিভোর লেসলি লোকো। এই স্কটিশ-ঘানিয়ান স্থপতি এবং শিক্ষাবিদ শুধু একজন শিল্পী নন, তিনি ভবিষ্যতের জন্য নতুন চিন্তাভাবনার জন্ম দিতে চান।
তাঁর প্রধান লক্ষ্য হলো স্থাপত্য শিক্ষাকে নতুন রূপে সাজানো, বিশেষ করে আফ্রিকায়। তিনি চান, এই মহাদেশের তরুণ প্রজন্ম আরো সৃজনশীল, গতিশীল এবং উদ্ভাবনী হোক।
লোকোর কর্মজীবন বহু সম্মানে উজ্জ্বল। তিনি প্রথম আফ্রিকান নারী যিনি রয়েল ইনস্টিটিউট অফ ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস (RIBA)-এর রয়্যাল গোল্ড মেডেল লাভ করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ স্থপতি যিনি ভেনিস বিয়েনালে-র কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর পরিকল্পনা ছিল রাজনৈতিক সচেতনতা, পরিবেশ-সচেতনতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তবে, তাঁর এই ভিন্ন পথে হাঁটা সমালোচনার ঊর্ধ্বে ছিল না।
লোকোর মতে, স্থাপত্যে ইউরোপীয় ধ্যান-ধারণার বাইরেও অনেক কিছু আছে যা আমাদের দেখা উচিত। তাঁর ছাত্রজীবনে, তিনি অনুভব করেছিলেন, স্থাপত্যের পাঠ্যক্রম ইউরোপীয় ধারণার বাইরে যেতে নারাজ।
তিনি মনে করতেন, আবহাওয়া, নির্মাণ সামগ্রী, বায়ু চলাচল—এসব বিষয়ে চিন্তা করার ধরন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন হতে পারে।
আফ্রিকার ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের লক্ষ্যে লোকো প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘আফ্রিকান ফিউচার্স ইনস্টিটিউট’ (AFI)। এটি মূলত একটি নতুন ধরনের ডিজাইন শিক্ষার ধারণা নিয়ে কাজ করে।
লোকো মনে করেন, বিশ্বের এখন দরকার আরো উচ্চাকাঙ্ক্ষী, সৃজনশীল এবং গতিশীল চিন্তাবিদ ও নির্মাতা। এই ইনস্টিটিউট ‘নোমাডিক আফ্রিকান স্টুডিও’ আয়োজন করে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন এবং অভিবাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সমস্যাগুলো স্থাপত্য ও নকশার মাধ্যমে নতুনভাবে তুলে ধরা হয়।
আফ্রিকার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিয়ে লোকো এই ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে আফ্রিকার তরুণদের নিজস্ব ধারণা ও জ্ঞানের উৎপাদক হিসেবে তুলে ধরতে চান। তিনি মনে করেন, আফ্রিকা শুধু কাঁচামালের যোগানদাতা নয়, বরং এটি ধারণার জন্ম দেয় এবং জ্ঞান সৃষ্টি করে।
লেসলি লোকো-র এই স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯০-এর দশকে লন্ডনে। সেই সময় স্থাপত্য ছিল পরীক্ষা-নিরীক্ষার এক উন্মুক্ত ক্ষেত্র।
কিন্তু তিনি অনুভব করেছিলেন, এই ডিসিপ্লিনটি ইউরোপীয় ধারণার বাইরে চিন্তা করতে অক্ষম।
লোকোর মতে, “আমরা সবাই কোনো না কোনো সংস্কৃতি থেকে এসেছি। আমাদের প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা আলাদা, তাই স্থাপত্যের ধারণাও বিভিন্ন হতে পারে।” তিনি মনে করেন, স্থাপত্য শিক্ষায় স্থানীয় সংস্কৃতি ও অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটানো জরুরি।
আফ্রিকার বাইরে লোকোর বেড়ে ওঠা এবং তাঁর শিক্ষাজীবনে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা তাঁকে এই পথে চলতে উৎসাহিত করেছে। তাঁর মতে, “প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ, প্রথম নারী—এসব পরিচয় আসলে অন্যদের দেওয়া।
তবে, এই পরিচয়গুলো আমাকে সমর্থনকারী, অনুদানকারী এবং সাহায্যকারীদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।”
বর্তমান বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। লোকো মনে করেন, আফ্রিকার মানুষ এই সমস্যার সঙ্গে বহু বছর ধরে লড়াই করছে।
তাঁর মতে, আফ্রিকা ভবিষ্যতের পরীক্ষাগার, যেখানে সকলে মিলে ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরি করতে পারে।
লেসলি লোকোর এই প্রচেষ্টা শুধু স্থাপত্যের জগৎকে নয়, বরং আমাদের সমাজকে নতুন পথে চালিত করতে পারে। তাঁর কাজের মাধ্যমে, আমরা দেখতে পাই, কীভাবে ঐতিহ্য ও আধুনিকতাকে মিশিয়ে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব।
তথ্য সূত্র: CNN