যুক্তরাষ্ট্রে স্থিতিশীল মুদ্রা বা ‘স্টেবলকয়েন’ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইন তৈরির পথে। এই পদক্ষেপের ফলে ডিজিটাল মুদ্রা বিশ্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসে ‘জিনিয়াস অ্যাক্ট’ নামে একটি বিল উত্থাপিত হয়েছে, যা স্টেবলকয়েনগুলোর নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরি করবে। এই বিলটি পাস হলে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থায় এর ব্যাপক ব্যবহার শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সোজা কথায় বলতে গেলে, স্টেবলকয়েন হলো এক ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রা, যা অন্য কোনো স্থিতিশীল সম্পদের সঙ্গে যুক্ত থাকে। সাধারণত, এর মূল্য মার্কিন ডলারের সমান রাখা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, একটি স্টেবলকয়েন-এর মূল্য ১ মার্কিন ডলারের সমান হয়। এই কারণে ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারের অস্থিরতা থেকে বাঁচতে বিনিয়োগকারীরা এটিকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্টেবলকয়েন এখন মূলধারায় প্রবেশ করতে চলেছে। কারণ, এই ধরনের মুদ্রার ব্যবহার ডিজিটাল পেমেন্ট এবং আন্তঃসীমান্ত লেনদেনের ক্ষেত্রে বাড়ছে।
যেমন, ভিসা (Visa) সম্প্রতি একটি স্টেবলকয়েন কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্বের ঘোষণা করেছে, যার মাধ্যমে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে পেমেন্ট করা যাবে।
বর্তমানে, বাজারে দুটি প্রধান স্টেবলকয়েন হলো- টিথার (Tether) এবং সার্কেল (Circle)। এল সালভাদরে অবস্থিত টিথার-এর ইস্যু করা USDT-এর বাজারমূল্য প্রায় ১৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা স্টেবলকয়েন বাজারের ৬২ শতাংশ।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সার্কেল-এর USDC-এর বাজারমূল্য প্রায় ৬১ বিলিয়ন ডলার, যা বাজারের প্রায় ২৫ শতাংশ।
২০২০ সালে স্টেবলকয়েন-এর বাজার ছিল মাত্র ২০ বিলিয়ন ডলারের, যা ২০২৫ সালের মধ্যে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪৬ বিলিয়ন ডলারে। এই বিশাল উত্থান প্রমাণ করে, ডিজিটাল মুদ্রার জগতে স্টেবলকয়েন-এর চাহিদা বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্টেবলকয়েন-এর প্রধান সুবিধা হলো এটি সীমান্ত পেরিয়ে দ্রুত এবং কম খরচে অর্থ পাঠাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, একজন বাংলাদেশি শ্রমিক যদি বিদেশে কাজ করেন, তাহলে তিনি স্টেবলকয়েন ব্যবহার করে দ্রুত এবং সহজে দেশে টাকা পাঠাতে পারবেন, যা প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার চেয়ে অনেক বেশি সুবিধাজনক হতে পারে। বর্তমানে, বাংলাদেশেও রেমিট্যান্স একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত, তাই স্টেবলকয়েন-এর এই সুবিধা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, স্টেবলকয়েন-এর কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। যদি এর সঙ্গে যুক্ত থাকা সম্পদের মূল্য কমে যায়, তাহলে এর দামও কমে যেতে পারে। এছাড়া, ডিজিটাল ওয়ালেটের পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে বা হ্যাক হলে ব্যবহারকারীরা তাদের অর্থ হারাতে পারেন।
‘জিনিয়াস অ্যাক্ট’ নামে পরিচিত এই আইনটি স্টেবলকয়েনগুলোর নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরি করবে। এই আইনের ফলে স্টেবলকয়েন কোম্পানিগুলোকে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে, যা গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
যদিও কেউ কেউ মনে করেন, এই আইনে স্টেবলকয়েন-এর ঝুঁকিগুলো সম্পূর্ণভাবে মোকাবেলা করা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে স্টেবলকয়েন নিয়ে আইন তৈরির বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর ফলে ডিজিটাল মুদ্রার ভবিষ্যৎ এবং বিশ্ব অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
যেহেতু বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি এখনো সেভাবে জনপ্রিয় হয়নি, তাই এই ধরনের পদক্ষেপগুলো আমাদের দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
ভবিষ্যতে, স্টেবলকয়েন ডিজিটাল পেমেন্ট এবং আন্তঃসীমান্ত লেনদেনের ক্ষেত্রে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে, আমাদের দেশের নীতিনির্ধারক এবং সাধারণ মানুষকেও এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন