সঙ্গীত উৎসব: বিশ্বজুড়ে টিকিটের কাটতি কমছে, সংকটে কি সঙ্গীতের এই মিলনমেলা?
গানের জগতে উৎসবের মরসুম যেন এক প্রাণবন্ত দৃশ্য। সারা বিশ্বজুড়ে, গ্রীষ্মকাল মানেই যেন বিভিন্ন সঙ্গীত উৎসবের আনাগোনা। কিন্তু সম্প্রতি, এই উৎসবগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। টিকিট বিক্রি কমে যাওয়া এবং একের পর এক উৎসব বাতিল হওয়ার ঘটনাগুলি কি তবে সঙ্গীতের এই মিলনমেলাকে গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে?
এই প্রবণতা কিন্তু নতুন নয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই এই সংকট ধীরে ধীরে বাড়ছে। শিকাগোর জনপ্রিয় ‘পিচফর্ক মিউজিক ফেস্টিভ্যাল’ এবার হচ্ছে না, তেমনই গত বছর আটলান্টার ‘মিউজিক মিডটাউন’ এবং ফ্লোরিডার ‘কিকঅফ জ্যাম’-এর মতো উৎসবগুলিও বাতিল হয়েছে। এমনকি, জে-জির ‘মেড ইন আমেরিকা’ উৎসব এবং ডেলাওয়্যারের ‘ফায়ারফ্লাই মিউজিক ফেস্টিভ্যাল’-এর মতো জনপ্রিয় উৎসবগুলিও ২০২২ সালের পর থেকে আর দেখা যাচ্ছে না। হিসাব বলছে, শুধু এই বছরই ৪০টির বেশি উৎসব বাতিল হয়ে গেছে।
শুধু উৎসব বাতিলই নয়, টিকিট বিক্রির হতাশাজনক চিত্রও উদ্বেগের কারণ। এক সময়ের জনপ্রিয় ‘কোচেলা’ উৎসবে, যা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে টিকিট বিক্রি হয়ে যেত, সেখানেও এবার মাসব্যাপী টিকিট উপলব্ধ ছিল। মিশিগানের ‘ইলেক্ট্রিক ফরেস্ট’-এর মতো ইলেক্ট্রনিক ও জ্যাম ব্যান্ড সঙ্গীতের উৎসবেও টিকিট বিক্রি কমেছে, যা পুরো পরিস্থিতির ওপর আরও বেশি করে আলোকপাত করছে।
এই পতনের কারণ হিসেবে অনেকে বলছেন, রুচি বদল হয়েছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নতুন শিল্পীদের সম্পর্কে আগ্রহ কমেছে। তাছাড়া, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষের বাজেটও আগের থেকে অনেক বেশি সীমিত হয়ে পড়েছে।
একসময় সঙ্গীত উৎসবগুলি ছিল নতুনত্বের প্রতীক। গান এবং পরিবেশের এক ভিন্ন স্বাদ পাওয়া যেত সেখানে। কিন্তু টিকিট বিক্রি কমে যাওয়া এবং উৎসব বাতিলের ঘটনাগুলো উৎসবের জগতে এক কঠিন পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে, যদিও লাইভ সঙ্গীতের অন্যান্য দিক এখনো বেশ ভালোভাবেই চলছে।
আগেকার দিনে, সঙ্গীত উৎসব মানেই ছিল গ্রীষ্মের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্বের প্রায় সব বড় শহরেই এমন উৎসবের আয়োজন করা হতো। সত্তরের দশকে, নিউ ইয়র্কের একটি দুগ্ধ খামারে অনুষ্ঠিত ‘উডস্টক’ উৎসবে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ একসঙ্গে গান শুনেছিল। সেই উৎসবের স্মৃতি আজও মানুষের মনে গেঁথে আছে।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই বদলেছে। নব্বইয়ের দশকে ‘কোচেলা’, ‘লল্লাপালাজা’-এর মতো উৎসবগুলির শুরু হয়। ‘লল্লাপালাজা’ একসময় জেনারেশন এক্স-এর কাছে ‘উডস্টক’-এর মতোই পরিচিতি লাভ করে, যেখানে বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীতের এক দারুণ সমাহার ছিল।
কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন। সঙ্গীত উৎসবের খরচ বেড়েছে, টিকিটের দাম বেড়েছে, যার কারণে অনেক শিল্পী এখন নিজেদের বিশ্বব্যাপী কনসার্ট করতে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।
অর্থনীতিবিদ উইল পেজের মতে, মানুষ এখন ঝুঁকি নিতে চাইছে না। তারা এখন পছন্দের শিল্পীর কনসার্টে যেতে বেশি আগ্রহী, উৎসবের অনিশ্চয়তার চেয়ে।
উৎসব আয়োজকদের জন্যও পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠছে। একদিকে যেমন টিকিট বিক্রির চ্যালেঞ্জ, তেমনই অনুষ্ঠানের খরচও বাড়ছে। ছোটখাটো উৎসবগুলির পক্ষে এই খরচ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে।
আবহাওয়ার পরিবর্তনও একটা বড় সমস্যা। অতিবৃষ্টি বা তীব্র গরমের কারণে অনেক সময় অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়।
কিন্তু সঙ্গীত উৎসবগুলি কি তাদের আকর্ষণ হারাচ্ছে? বড় উৎসবগুলিতে একই শিল্পী এবং সঙ্গীতের ধারা দেখা যায়, যা অনেক পুরোনো শ্রোতাদের কাছে একঘেয়ে মনে হতে পারে।
ছোট আকারের উৎসবগুলি অবশ্য ভিন্ন পথে হাঁটছে। তারা সঙ্গীতের পাশাপাশি, পরিবেশ সচেতনতা, কর্মশালা এবং অন্যান্য আকর্ষণ যোগ করছে, যা দর্শকদের আকৃষ্ট করতে সাহায্য করে।
ভবিষ্যতে, সঙ্গীতের এই উৎসবগুলি যদি তাদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে পারে, তবেই হয়তো তারা টিকে থাকতে পারবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন