যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ফলস্বরূপ, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ সহজ করার একটি পরিকল্পনা নিয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মধ্য দিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা কমাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আলোচনায় হওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, উভয় দেশই তাদের মধ্যেকার বাণিজ্যিক সম্পর্ককে স্বাভাবিক করতে চাইছে। এর অংশ হিসেবে, চীনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিরল মৃত্তিকা ধাতু (rare earth minerals) সরবরাহ বৃদ্ধি এবং যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক চীন থেকে চিপ ডিজাইন সফটওয়্যার রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে। এই চুক্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে উভয় দেশের নেতৃত্ব পর্যায়ে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
লন্ডন বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীনের বিরল মৃত্তিকা ধাতু ও চুম্বক রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এই চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই বিরল ধাতুগুলো আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প, যেমন – গাড়ি নির্মাণ থেকে শুরু করে যুদ্ধবিমান তৈরি পর্যন্ত, সব ক্ষেত্রেই অপরিহার্য।
আলোচনায় বাণিজ্য যুদ্ধের পরিবর্তে সহযোগিতা এবং পারস্পরিক সমঝোতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। চীন জানিয়েছে, তারা কোনো সংঘাতে জড়াতে চায় না, তবে প্রয়োজনে নিজেদের অধিকার রক্ষায় প্রস্তুত।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও উন্মুক্ত করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। এই আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক নীতি।
বিশেষ করে, বিশ্বের বৃহত্তম এই দুই অর্থনীতির মধ্যেকার বাণিজ্য যুদ্ধে, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এছাড়াও, চীন বর্তমানে বিরল মৃত্তিকা ধাতু উৎপাদনে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে আছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে চীনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) সংক্রান্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে আসছে। এর মূল কারণ ছিল, চীন যেন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে না পারে।
এই পরিস্থিতিতে, চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে তাদের চিপ বিষয়ক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠেছে এবং নতুন উদ্ভাবন নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রেক্ষাপটে, এই ধরনের আলোচনা এবং চুক্তিগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, এর মাধ্যমে একদিকে যেমন দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়, তেমনি বিশ্ব অর্থনীতিতেও স্থিতিশীলতা আসে। এই আলোচনার ফলস্বরূপ, বিশ্ব বাণিজ্য বাজারে একটি ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন