যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ রায় ঘোষণার প্রাক্কালে নিজেদের রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
বিচারকদের এই ধরনের আচরণ তাদের নিরপেক্ষতার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে বলে অনেকে মনে করছেন। খবরটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।
সাধারণত, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ মামলার রায় দেওয়ার সময় আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন। কিন্তু সম্প্রতি কিছু রায়ে তাঁদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং নীতিগত পছন্দগুলি স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
বিচারপতি ব্র্রেট কাভানাফ একটি পরিবেশ বিষয়ক মামলার রায়ে অবকাঠামো উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে সরকারের ‘বারংবার বিলম্বের’ সমালোচনা করেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এতে রেলপথ, বিমানবন্দর, উইন্ড টারবাইন, বাঁধ, এবং অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলি নির্মাণে সমস্যা হবে, যা কর্মসংস্থান কমাতেও পারে।
অন্যদিকে, বিচারপতি ক্ল্যারেন্স থমাস একটি মামলায় ভিন্নমত পোষণ করে ‘বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি’ (DEI) বিষয়ক বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা করেন। তাঁর মতে, এমন পদক্ষেপের কারণে সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য হতে পারে।
বিচারপতি কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসনও তাঁর একটি ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন।
তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সঙ্গে নিম্ন আদালতের বিচারকদের কাজের ভিন্নতা তুলে ধরেন। তাঁর মতে, নিম্ন আদালতের বিচারকেরা ‘কঠোর পরিশ্রম’ করে এবং ‘যুক্তিপূর্ণ রায়’ দেন, যেখানে সুপ্রিম কোর্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ‘জরুরি অবস্থার মতো’ কাজ করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিচারপতিদের এই ধরনের মন্তব্য তাঁদের নিরপেক্ষতার ধারণাকে দুর্বল করে দেয়। প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস যদিও সবসময় বিচারকদের ‘নিরপেক্ষ’ থাকার কথা বলেন, তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক বিষয়গুলো সরাসরি তাঁদের মন্তব্যে উঠে আসছে।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি চলছে, যেগুলোর রায় আগামী জুনের মধ্যে দেওয়ার কথা রয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে লিঙ্গ পরিবর্তনকারী তরুণদের চিকিৎসা বিষয়ক রাজ্যের নিষেধাজ্ঞা, এবং এলজিবিটিকিউ বিষয়ক পাঠ্যক্রম থেকে শিশুদের সরিয়ে নেওয়ার মতো বিষয়গুলো। এছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসনের জন্মগত নাগরিকত্ব বাতিলের চেষ্টা নিয়েও শুনানি চলছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা।
যদি ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েলকে অপসারণ করতে পারতেন, তবে তা বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতো। সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে একটি রায় দেওয়ার সময় ফেডারেল রিজার্ভকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়।
বিচারপতি এলেনা কাগান এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেছেন, এটি রাজনৈতিক প্রভাবের ফল। তিনি মনে করেন, জরুরি পরিস্থিতিতে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার পরিবর্তে আদালতের উচিত ছিল প্রেসিডেন্টের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা।
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মধ্যে প্রায়ই রাজনৈতিক বিভাজন দেখা যায়। রক্ষণশীল বিচারপতিগণ রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টদের দ্বারা এবং উদারপন্থী বিচারপতিগণ ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্টদের দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে, যা তাঁদের নিরপেক্ষতা এবং দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন