মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বৃহৎ মর্টগেজ ঋণদানকারী সংস্থা, ফ্যানি মে এবং ফ্রেডি ম্যাক-কে পুনরায় পাবলিক করার পরিকল্পনা করছেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বজুড়ে আর্থিক বাজারে আসতে পারে বড় ধরনের পরিবর্তন। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ফ্যানি মে এবং ফ্রেডি ম্যাক-এর মূল কাজ হলো ঋণদাতাদের কাছ থেকে মর্টগেজ কিনে সেগুলোকে একত্র করে বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করা, যা আমেরিকার আবাসন বাজারে অর্থের প্রবাহ বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই দুটি সংস্থা বর্তমানে ফেডারেল সরকারের তত্ত্বাবধানে রয়েছে, যা ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের সময় শুরু হয়েছিল।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের ফলে গত ১৭ বছর ধরে চলা সরকারি নিয়ন্ত্রণের অবসান হতে পারে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ হলো, কিছু হেজ ফান্ড (Hedge Funds) এবং বিনিয়োগকারী সংস্থা, যারা এই দুটি কোম্পানির শেয়ার কিনেছিল, তারা এখন তাদের বিনিয়োগের ভালো প্রতিদান পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। বিলিয়নেয়ার বিনিয়োগকারী বিল অ্যাকম্যানের মতো ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে এই পরিবর্তনের পক্ষে ওকালতি করছেন।
তাদের মতে, এই পদক্ষেপের ফলে শেয়ারহোল্ডাররা লাভবান হবেন।
তবে, এই সিদ্ধান্তের কিছু সম্ভাব্য বিপদও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফ্যানি মে এবং ফ্রেডি ম্যাক-কে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার ফলে মর্টগেজ ঋণের সুদ বাড়তে পারে, যা বাড়ির ক্রেতাদের জন্য একটি খারাপ খবর।
কারণ, সুদের হার বাড়লে বাড়ি কেনার খরচও বেড়ে যাবে। তাছাড়া, এই পদক্ষেপের ফলে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে, কারণ সরকার প্রদত্ত নিশ্চয়তা (government backstop) কমে গেলে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নিতে চাইবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট দল এই পরিকল্পনার সমালোচনা করে বলেছেন, এটি সম্ভবত বিনিয়োগকারীদের মুনাফা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তারা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে আবাসন ব্যয় আরো বাড়বে।
বর্তমানে, ফ্যানি এবং ফ্রেডি উভয় সংস্থাই মার্কিন সরকারের কাছে বিশাল পরিমাণ ঋণী। তাই, এই দুটি কোম্পানিকে পুনরায় পাবলিক করার প্রক্রিয়া বেশ জটিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মুহূর্তে ফ্যানি এবং ফ্রেডি-র নেট সম্পদের পরিমাণ প্রায় -২০০ বিলিয়ন ডলার, যা সরকার তাদের পুনরুদ্ধারের জন্য দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, ফ্যানি মে এবং ফ্রেডি ম্যাক-এর শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগ কতটা লাভজনক হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ, সরকার তাদের ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত অন্য শেয়ারহোল্ডাররা লাভবান হতে পারবে না।
যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তবে এর প্রভাব শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। বিশ্ব অর্থনীতির ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।
কারণ, এই ধরনের পরিবর্তন আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে। বিশ্ব অর্থনীতির যেকোনো পরিবর্তনে আমাদের দেশের আর্থিক বাজারে যাতে বড় ধরনের ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তথ্যসূত্র: CNN