এলন মাস্কের রোবট ট্যাক্সি: স্বপ্ন নাকি শুধুই ফানুস?

শিরোনাম: টেসলার স্ব-চালিত ট্যাক্সি প্রকল্প: প্রতিযোগিতার চাপ ও রাজনৈতিক প্রভাব

এলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন টেসলা বর্তমানে তাদের বহুল প্রতীক্ষিত স্ব-চালিত ট্যাক্সি প্রকল্প, যা ‘রোবট্যাক্সি’ নামে পরিচিত, সেটি চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আগামী ২২শে জুন টেক্সাসের অস্টিনে এই প্রকল্পের পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রা শুরুর কথা রয়েছে, তবে মাস্ক নিজেই এর সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে সন্দিহান।

নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়টিকে তিনি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন।

টেসলার এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পের ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন কোম্পানিটি একদিকে যেমন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করছে, তেমনি তাদের ব্র্যান্ডের ভাবমূর্তিও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।

বিশেষ করে, মাস্কের রাজনৈতিক মন্তব্যের কারণে অনেক ক্ষেত্রে টেসলার গ্রহণযোগ্যতা কমেছে।

উদাহরণস্বরূপ, চীনের বাজারে টেসলার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সাইবারট্রাকসহ অন্যান্য মডেলের চাহিদা কমে যাওয়ায় পুরনো গাড়িগুলো বিক্রি করতেও সমস্যা হচ্ছে।

অন্যদিকে, এই স্ব-চালিত ট্যাক্সি প্রযুক্তির বাজারে ইতোমধ্যে গুগলের ‘ওয়েমো’ (Waymo) তাদের সেবা চালু করেছে।

২০২০ সাল থেকে তারা এই সেবা দিয়ে আসছে এবং বর্তমানে সান ফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস, ফিনিক্স ও অস্টিনে প্রতি সপ্তাহে প্রায় আড়াই লক্ষ যাত্রী তাদের স্ব-চালিত ট্যাক্সি ব্যবহার করছেন।

যদিও এই মুহূর্তে ওয়েমোর ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক নয়, তবে তাদের ক্ষতি প্রযুক্তি জায়ান্টদের জন্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।

বিশ্লেষকদের মতে, টেসলার জন্য এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, একদিকে যেমন তাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা প্রমাণ করা, তেমনি ব্র্যান্ডের ওপর থেকে নেতিবাচক প্রভাব দূর করা।

টেসলার শেয়ারের দামও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যা তাদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ।

অতীতে মাস্ক প্রায়ই বিভিন্ন প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছেন, কিন্তু সময়মতো তা সম্পন্ন করতে পারেননি।

উদাহরণস্বরূপ, ‘সাইবারক্যাব’ উন্মোচনের পর টেসলার শেয়ারের দাম ৯ শতাংশ কমে গিয়েছিল।

কারণ, সেই অনুষ্ঠানে তাদের ‘ফুল সেলফ-ড্রাইভিং’ প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং কর্মীদের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে টেসলার জন্য তাদের ‘রোবট্যাক্সি’ প্রকল্প সফল করা অত্যন্ত জরুরি।

কারণ, এর মাধ্যমে তারা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারবে এবং তাদের ব্র্যান্ডের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে পারবে।

তবে, মাস্কের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

তিনি বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দল ও নেতাদের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেছেন, যা অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত ফল বয়ে আনেনি।

উদাহরণস্বরূপ, গত বছর তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অন্যান্য রিপাবলিকানদের জন্য প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩,২৭০ কোটি টাকা) ব্যয় করেছিলেন, যা পরবর্তীতে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়।

এমনকি, টুইটার কেনার পর এর পরিচালনা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হওয়ায় প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারকারী ও বিজ্ঞাপনদাতাদের আস্থা হারিয়েছে।

সব মিলিয়ে, টেসলার জন্য এখন কঠিন সময়।

তাদের ‘রোবট্যাক্সি’ প্রকল্প একদিকে যেমন প্রযুক্তিগত সাফল্যের প্রমাণ দিতে হবে, তেমনি মাস্কের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাবও কাটাতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *