বাংলাদেশের বাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন একটি দিগন্ত উন্মোচন হতে যাচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা এবং বিনিয়োগ বিশ্লেষকদের মতে, ব্যক্তিগত ইক্যুইটি বা প্রাইভেট ইক্যুইটিতে (Private Equity) বিনিয়োগ এখন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করছে।
মূলত, এই ধরনের বিনিয়োগ হলো এমন সব কোম্পানিতে অর্থ খাটানো, যেগুলোর শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত নয়। উন্নত দেশগুলোতে অবসরকালীন সঞ্চয় প্রকল্পগুলোতেও (যেমন, আমেরিকার 401(k) প্ল্যান) এই ধরনের বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
প্রশ্ন হলো, এই বিনিয়োগ কি আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভজনক হতে পারে?
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় হলো, এই ধরনের বিনিয়োগের স্বচ্ছতা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির মতো নিয়মিতভাবে তাদের আর্থিক হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হয় না।
তাছাড়া, প্রাইভেট ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ করা অর্থ সহজে উঠিয়ে নেওয়া যায় না, যা এটিকে কম তরল (illiquid) করে তোলে। অর্থাৎ, প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রুত এই বিনিয়োগ ভাঙিয়ে নগদ অর্থ পাওয়া কঠিন হতে পারে।
তবে, প্রাইভেট ইক্যুইটিতে বিনিয়োগের কিছু ভালো দিকও রয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এতে বিনিয়োগ করলে ভালো রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কারণ, তালিকাভুক্ত কোম্পানির তুলনায় প্রাইভেট কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগের সুযোগ অনেক বেশি থাকে। ফলে, একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ পোর্টফোলিও (portfolio) তৈরি করা যেতে পারে, যা বাজারের অস্থিরতা থেকে সুরক্ষা দিতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ব্ল্যাকরকের (BlackRock) প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রবার্ট গোল্ডস্টেইন (Robert Goldstein) বলেছেন, বর্তমানে পাবলিক স্টক ও বন্ডের পারফরম্যান্সের মধ্যে সম্পর্ক আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে, তাই কম পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত সম্পদ পেতে হলে প্রাইভেট মার্কেটের দিকে ঝুঁকতে হয়।
বর্তমানে উন্নত দেশগুলোতে বিভিন্ন অবসরকালীন সঞ্চয় প্রকল্পে প্রাইভেট ইক্যুইটিতে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা কমে যাওয়া এবং বিনিয়োগের সুযোগ সীমিত হয়ে আসা।
তবে, এই ধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের বেশি ফি দিতে হতে পারে এবং স্বচ্ছতার অভাব থাকতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাইভেট ইক্যুইটিতে বিনিয়োগের আগে বিস্তারিত গবেষণা করা প্রয়োজন। কারণ, প্রতিটি বিনিয়োগের নিজস্ব ঝুঁকি থাকে।
এই ধরনের বিনিয়োগে বাজারের উত্থান-পতন, সুদের হার, ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের মতো বিষয়গুলো প্রভাব ফেলে। তাই, বিনিয়োগের আগে একজন অভিজ্ঞ আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা বলছে, নভেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, দেশটির মাত্র ২.৪% অবসরকালীন সঞ্চয় প্রকল্পে প্রাইভেট ইক্যুইটিতে বিনিয়োগের সুযোগ ছিল। তবে, ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সচেতন থাকতে হবে এবং তাদের বিনিয়োগের ঝুঁকি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।
পরিশেষে, প্রাইভেট ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ একটি জটিল বিষয়। এটি উচ্চ মুনাফার সম্ভাবনা দেখালেও, এর সঙ্গে ঝুঁকিও জড়িত। তাই, বিনিয়োগ করার আগে এর ভালো-মন্দ দিকগুলো বিবেচনা করে, নিজের আর্থিক সামর্থ্য ও ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: সিএনএন