শিরোনাম: ১৭ বছর পর, অস্ত্রোপচার সফল: হাত ফিরে পেলেন সুইস নাগরিক
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে, প্রায় ১৭ বছর পর বিরল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নতুন দুটি হাত ফিরে পেলেন লুক ক্রিজানাক নামের এক সুইস নাগরিক। জটিল এই প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পেন মেডিসিন হাসপাতালে।
ছোটবেলায় মারাত্মক এক সংক্রমণের কারণে ক্রিজানাকের হাত ও পায়ের কিছু অংশ বাদ দিতে হয়। এরপর থেকে, হাতবিহীন জীবন ছিল তার জন্য এক কঠিন বাস্তবতা। দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে, অন্যের ওপর নির্ভর করতে হতো তাকে। খাবার খাওয়া থেকে শুরু করে নিজেকে পরিপাটি রাখা—সবকিছুতেই ছিল সীমাবদ্ধতা।
চিকিৎসকরা জানান, হাত প্রতিস্থাপন খুবই জটিল একটি প্রক্রিয়া। সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত ১৪৮টির মতো এমন অস্ত্রোপচার হয়েছে। ক্রিজানাকের অস্ত্রোপচারে জড়িত ছিলেন ২০ জনের বেশি অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। অস্ত্রোপচারটি প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে চলেছিল।
চেতনা ফেরার পর ক্রিজানাক যখন প্রথম তার নতুন হাত দুটি দেখেন, তখন তিনি নার্সকে বলেছিলেন, “দেখো, আমার হাতগুলো কী সুন্দর!”
অনুভূতিটা শুধু সৌন্দর্যের ছিল না, বরং ছিল পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে আবার বাঁচার গভীর আনন্দ। ক্রিজানাক বলেন, “হাত না থাকার কষ্টটা আমি বুঝি। পায়ের চেয়ে হাতের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। হাতের মাধ্যমে মানুষ কত কিছুই না করতে পারে! খাওয়া, নিজের যত্ন নেওয়া থেকে শুরু করে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করা—সবকিছুতেই হাতের প্রয়োজন হয়। তাই, হাতের অভাবে একটি প্লাস্টিকের রোবোটিক হাত ব্যবহার করাটা ছিল আমার জন্য কার্যত অসম্ভব।”
নতুন হাত পাওয়ার জন্য ক্রিজানাক দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এবং অভিজ্ঞ ডাক্তারের অভাবের কারণে তার স্বপ্ন পূরণ হতে দেরি হচ্ছিল। অবশেষে ২০১৮ সালে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় ডা. এল. স্কট লেভিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ডা. লেভিন পেন মেডিসিনের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের প্রধান এবং প্লাস্টিক সার্জারির অধ্যাপক।
তিনি ক্রিজানাকের দৃঢ়তা ও ইচ্ছাশক্তি দেখে মুগ্ধ হন।
তবে, কোভিড-১৯ মহামারি এবং ক্রিজানাকের পায়ে হওয়া কিছু ক্ষত—এসব কারণে অস্ত্রোপচার আরও বিলম্বিত হয়। অবশেষে, সব বাধা পেরিয়ে, পেন মেডিসিনের চিকিৎসক দল সফলভাবে এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করতে সক্ষম হন।
অস্ত্রোপচারের পর ক্রিজানাকের সেরে ওঠার প্রক্রিয়া বেশ ভালোভাবেই চলছে। স্নায়ুগুলো ধীরে ধীরে সক্রিয় হচ্ছে এবং তিনি আগের চেয়ে অনেক বেশি অনুভূতি ফিরে পাচ্ছেন। নিয়মিত ফিজিওথেরাপি এবং কিছু ওষুধ সেবনের মাধ্যমে তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে।
ডা. লেভিন জানান, এই ধরনের অস্ত্রোপচার জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিজানাক এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মনির্ভরশীল হতে পারছেন। তিনি বলেন, “আমি আবার আগের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চাই। এমনকি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ারও ইচ্ছা আছে।”
চিকিৎসকরা মনে করেন, এই ধরনের অস্ত্রোপচার চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যদিও বাংলাদেশে এখনো এই ধরনের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা সেভাবে গড়ে ওঠেনি, তবে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই ধরনের সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন