পোপ লিওর পোশাক-আশাক: পরিবর্তনের ইঙ্গিত?
ভ্যাটিকান সিটি থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর পোপ লিও ১৪-এর পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর পোশাকে ঐতিহ্যবাহী ধারার পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে, যা অনেকের মনে প্রশ্ন তৈরি করেছে – এই পরিবর্তনের আসল অর্থ কী?
গত ৮ই মে, নতুন পোপ সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার কেন্দ্রীয় বারান্দায় এসে যখন জনতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তখন তাঁর পোশাক ছিল পূর্ববর্তী পোপ ফ্রান্সিসের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। পোপ ফ্রান্সিসের সাদাসিধে সাদা পোশাক এবং রুপোর ক্রুশের বদলে, লিও পরেছিলেন লাল রঙের সাটিনের মোজেটা (কাঁধের আচ্ছাদন), সোনার সূচিকর্ম করা মেরুন রঙের স্টোলা এবং সোনালী সুতোয় বাঁধা সোনার ক্রস। খবর অনুযায়ী, নতুন পোপের পোশাকের এই পরিবর্তন যেন পুরনো দিনের ফ্যাশনে ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত।
পোপ লিও-এর এই পোশাকি পরিবর্তনের কারণ নিয়ে আলোচনা চলছে। অনেকে মনে করছেন, পোপ ফ্রান্সিসের সংস্কারপন্থী নীতির পর, লিও-এর এই ঐতিহ্যপূর্ণ পোশাক হয়তো নীতিগত পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী ল্যাটিন ভাষায় প্রার্থনা (Latin Mass) পুনরায় চালু করার সম্ভাবনা নিয়ে অনেকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এই ল্যাটিন ভাষার প্রতি পোপের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে এবং তিনি প্রায়শই এই ভাষায় প্রার্থনা করেন।
ধর্ম বিষয়ক অধ্যাপক ফাদার জন ওয়াওকের মতে, পোপ লিও-এর পোশাক নির্বাচন ‘ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান’ প্রদর্শন করে। তাঁর মতে, এই ধরনের পোশাক পোপ ষষ্ঠদশ বেনেডিক্ট ও পোপ দ্বিতীয় জন পলের মতো অতীতের পোপদের কথা মনে করিয়ে দেয়। অনেকেই মনে করেন, পোপের এই ধরনের পোশাক ঐতিহ্যপ্রিয় ক্যাথলিকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, ভ্যাটিকান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাসিমো ফাগিওলির মতে, পোপ লিও-এর পোশাক এবং প্রথাগত রীতির পরিবর্তন, পোপ ফ্রান্সিসের সংস্কারগুলো পরিবর্তন করবে কিনা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীলরা পোপ লিও-এর ঐতিহ্যবাহী পোশাক দেখে বেশ খুশি হয়েছেন, কারণ পোপ ফ্রান্সিস ফ্যাশনের জাঁকজমকের বিরোধী ছিলেন।
পোপ লিও-এর পোশাকের পাশাপাশি, তিনি ভ্যাটিকানের আরও কিছু পুরনো রীতি ফিরিয়ে এনেছেন, যা পোপ ফ্রান্সিস এড়িয়ে চলতেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি তাঁর আংটি চুম্বন করার প্রথাটি ফিরিয়ে এনেছেন। পোপ ফ্রান্সিস সাধারণত এই কাজটি পছন্দ করতেন না এবং কেউ আংটি চুম্বন করতে গেলে তিনি প্রায়শই হাত সরিয়ে নিতেন।
ফাদার ওয়াওকের মতে, “আমরা পোপ লিও-এর মধ্যে ঐতিহ্যকে গ্রহণ করার প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি, যা হয়তো পোপ ফ্রান্সিসের থেকে কিছুটা আলাদা।”
পোপ লিও আগামী দিনে অ্যাপোস্টলিক প্যালেসের পুরনো বাসভবনে উঠবেন কিনা, সে বিষয়েও জল্পনা চলছে। পোপ ফ্রান্সিস তাঁর ১২ বছরের শাসনামলে, সাধারণ একটি বাড়িতে বসবাস করতেন। সবমিলিয়ে, পোপ লিও-এর এই পোশাক নির্বাচন এবং পুরনো রীতিতে ফেরার বিষয়টি বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস