মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিতর্কিত ‘অরগাসমিক মেডিটেশন’ (যৌন উদ্দীপনা বিষয়ক চর্চা) বিষয়ক একটি প্রতিষ্ঠানের দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে ফেডারেল আদালত জোরপূর্বক শ্রমিক নিয়োগের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে। ব্রুকলিনের একটি আদালত সোমবার এই রায় দেন।
জানা গেছে, ওয়ানটেস্ট ইনকর্পোরেটেড নামক এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা নিকোল ডেডোন এবং প্রাক্তন সেলস ডিরেক্টর র্যাচেল শেরউইটজকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আদালত পাঁচ সপ্তাহের বিচার শেষে এই রায় দেন, যেখানে শুনানির জন্য দুই দিনের কম সময় লেগেছিল।
অভিযুক্তদের প্রত্যেককে সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
অভিযোগ অনুযায়ী, ডেডোন এবং শেরউইটজ দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র চালাতেন, যেখানে তারা যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীদের আকৃষ্ট করতেন এবং তাদের কথা মতো কাজ করতে বাধ্য করতেন।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা অর্থনৈতিক, যৌন এবং মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে ওয়ানটেস্টের সদস্যদের যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য করতেন, যা তারা স্বাভাবিকভাবে করতে স্বচ্ছন্দ ছিলেন না।
এমনকি, বিনিয়োগকারী বা ক্লায়েন্টদের সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক গড়তে বাধ্য করা হতো।
অভিযুক্তরা তাদের অনুসারীদের বলতেন, তথাকথিত ‘স্বাধীনতা’ এবং ‘আধ্যাত্মিক জ্ঞান’ অর্জনের জন্য এই ধরনের কাজগুলো অপরিহার্য।
সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের নীতি-আদর্শের প্রতি নিজেদের দায়বদ্ধতা প্রমাণ করতেও এটা জরুরি।
প্রসিকিউটররা আরও জানান, ওয়ানটেস্টের নেতারা সদস্যদের প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ করেননি। বরং কর্মীদের কাছ থেকে নতুন ক্রেডিট কার্ড তৈরি করে, তাদের মাধ্যমে কোম্পানির বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হতো।
সহকারী মার্কিন অ্যাটর্নি নিনা গুপ্তা তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, অভিযুক্তরা ভুক্তভোগীদের ‘পিঠের ওপর ভর করে’ তাদের ব্যবসা তৈরি করেছেন।
ভুক্তভোগীরা তাদের ‘টাকা, সময়, শরীর, সম্মান এবং সবশেষে মানসিক সুস্থতা’ উৎসর্গ করেছিলেন।
নিউইয়র্কের পূর্বাঞ্চলীয় জেলার মার্কিন অ্যাটর্নি জোসেফ নোসেলা বলেন, “ডেডোন এবং শেরউইটজ ভুক্তভোগীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের যৌনক্ষমতা এবং সুস্থ জীবনের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করেছেন। এরপর তাদের দিয়ে বিভিন্ন কাজ করিয়ে নিজেদের সুবিধা হাসিল করেছেন।”
অন্যদিকে, ডেডোনের আইনজীবী তাকে একজন ‘নারী অধিকার আন্দোলনের অগ্রদূত’ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেন, যিনি নারীদের যৌনতা এবং ক্ষমতায়নের উপর ভিত্তি করে একটি ভিন্ন ধরনের ব্যবসা তৈরি করেছেন।
শেরউইটজের আইনজীবী সেলিয়া কোহেন যুক্তি দিয়েছিলেন যে, সাক্ষীরা কোনো কিছু করতে বাধ্য হননি।
যারা এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে থাকতে চাননি, তারা নিজেদের ইচ্ছামতো অন্য কিছু বেছে নিয়েছেন।
তবে, অভিযুক্তদের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তাদের মক্কেলরা নির্দোষ এবং তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
তারা এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা আজকের রায়ে হতাশ।
এই মামলায় বেশ কয়েকটি নতুন এবং জটিল আইনি বিষয় রয়েছে, যা সেকেন্ড সার্কিটে পর্যালোচনার প্রয়োজন।”
ওয়ানটেস্ট আসলে কী? ২০০৪ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে নিকোল ডেডোন ‘ওয়ানটেস্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন।
এটি ছিল এক ধরনের স্ব-সহায়ক কেন্দ্র, যেখানে নারীদের যৌনতাকে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা এবং পারস্পরিক সম্পর্কের চাবিকাঠি হিসেবে দেখা হতো।
এই প্রতিষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল ‘অরগাসমিক মেডিটেশন’ বা ‘ওএম’।
এখানে পুরুষরা একটি গোষ্ঠীবদ্ধ পরিবেশে নারীদের শরীরে বিশেষ পদ্ধতিতে উদ্দীপনা দিতেন।
২০১০-এর দশকে কোম্পানিটি ব্যাপক প্রচার লাভ করে এবং দ্রুত লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে লন্ডন পর্যন্ত তাদের শাখা খোলে।
নারীদের যৌন চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেওয়া একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর, তারা কোর্স, প্রশিক্ষণ এবং ওএম ইভেন্টের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে শুরু করে।
২০১৭ সালে ডেডোন তার শেয়ার ১ কোটি ২০ লক্ষ ডলারে বিক্রি করেন।
এরপরই কর্মীদের শোষণ এবং তাদের কাজের ধরনের বিষয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
বর্তমানে, কোম্পানিটি ‘দ্য ইনস্টিটিউট অফ ওএম ফাউন্ডেশন’ নামে পরিচিত।
তারা জানিয়েছে, তাদের কাজকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং প্রাক্তন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন।
তারা সবসময়ই যৌন সম্মতির প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন