ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা মারাত্মক রূপ নিয়েছে, যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ঝুঁকি আরও বাড়ছে। শনিবার উভয় পক্ষ একে অপরের উপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যার ফলস্বরূপ কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ক্ষতি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত এই সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছে।
শুক্রবার ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এর জবাবে, শনিবার তেহরানসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানো হয়।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তাদের হামলায় ইরানের সামরিক কমান্ডার এবং পরমাণু বিজ্ঞানীসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, ইরানের জাতিসংঘে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, তাদের হামলায় ৭৮ জন নিহত এবং ৩২০ জনের বেশি আহত হয়েছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ওমানে অনুষ্ঠিতব্য ষষ্ঠ দফা আলোচনা বাতিল করা হয়েছে। ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ইসরায়েলের হামলার কারণে আলোচনাটি স্থগিত করা হয়েছে।
সংঘর্ষের ফলে ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতেও ড্রোন হামলা হয়েছে। যদিও এই হামলা প্রতিহত করা হয়েছে, কিন্তু এর ফলে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে ফোনালাপ করে সর্বোচ্চ संयम প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন এবং দ্রুত আলোচনার টেবিলে ফেরার জন্য অনুরোধ করেছেন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীও এই অঞ্চলে সামরিক শক্তি পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
চীন ইসরায়েল ও ইরানের সঙ্গে আলোচনা করে উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও দুই দেশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং উত্তেজনা কমাতে সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং ইরানের বিরুদ্ধে তাদের বিজয়কে ট্রাম্পের বিজয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ইসরায়েলের নিন্দা করে ইরানের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। মিশর ও তুরস্কের নেতারা সতর্ক করেছেন যে, ইসরায়েলের এই আগ্রাসী পদক্ষেপ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে বিশৃঙ্খলা ডেকে আনতে পারে।
সংঘাতের কারণে, ইরানের গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস ক্ষেত্র এবং পরমাণু কেন্দ্রেও হামলার খবর পাওয়া গেছে। উপগ্রহ চিত্র থেকে জানা গেছে, ইরানের নাটানজ পারমাণবিক কেন্দ্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মহল থেকে উভয় পক্ষকে শান্তির পথে ফিরে আসার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস অবিলম্বে এই সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
সংঘাতের কারণে বিমান চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। অনেক দেশ তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, বিশ্ব নেতারা পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছেন। তবে, সংঘাত অব্যাহত থাকলে এর ফলস্বরূপ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস