কানাডায় জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন: যুদ্ধের ছায়া, ট্রাম্পের চালে বিশ্ব উদ্বিগ্ন!

কানাডায় জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলন: বিশ্ব নেতারা যখন ইসরায়েল-ইরান সংকট ও বাণিজ্য যুদ্ধের উদ্বেগে

কানাডার আলবার্টা প্রদেশের বান্ফে জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর নেতারা সমবেত হয়েছেন। তবে এই সম্মেলনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইসরায়েল-ইরান সংকট এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিত্র ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি বিশ্ব নেতাদের জন্য বেশ উদ্বেগের কারণ।

জি-সেভেন হলো বিশ্বের সাতটি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশগুলোর একটি জোট, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং জাপানের মতো প্রভাবশালী দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত। এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং বৈশ্বিক সমস্যাগুলো সমাধানে একসঙ্গে কাজ করা।

কিন্তু এবারের সম্মেলনে ইসরায়েল-ইরান সংকট এবং বাণিজ্য যুদ্ধের মতো বিষয়গুলো প্রাধান্য পাওয়ায় সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য কিছুটা হলেও ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইসরায়েল-ইরান সংকট নিয়ে এরই মধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্প এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সংকট নিরসনের উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

ব্রিটেন এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিমান ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। স্টারমার আরও বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তাদের দীর্ঘদিনের উদ্বেগ রয়েছে এবং ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে তারা সমর্থন করেন।

তবে পরিস্থিতিকে শান্ত করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, কারণ এতে পুরো অঞ্চলে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি নিয়েও অনেক আলোচনা হচ্ছে। ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন, যা জি-সেভেন দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও কঠিন করে তুলেছে।

বিশেষ করে, কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, ট্রাম্প নাকি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানোরও ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গ্রিনল্যান্ড সফর করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং সীমান্ত রক্ষার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এছাড়াও, ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়েও সম্মেলনে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।

কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জ্যাঁ ক্রিতিয়েন মনে করেন, ট্রাম্প যদি কোনো বিতর্কিত মন্তব্য করেন, তবে নেতাদের শান্ত থাকা উচিত। তিনি বলেন, “ট্রাম্প হয়তো আলোচনায় থাকার জন্য এমন কিছু করবেন। তাকে করতে দিন, আপনারা স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে থাকুন।”

জি-সেভেন সম্মেলনে ভারতের পাশাপাশি ইউক্রেন, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাণিজ্য শুল্ক কমানোর বিষয়টি শীর্ষ আলোচনার বিষয় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্য সম্পর্কের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হলে, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

তাই, এই সম্মেলনের দিকে এখন সবারই নজর রয়েছে।

তথ্য সূত্র:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *