ট্রাম্পের ১০ বছরে: কিভাবে বদলে গেলো রাজনীতি?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থান: কিভাবে গত দশ বছরে বদলে গেছে মার্কিন রাজনীতি।

২০১৬ সালে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রচার শুরু করেন, তখন অনেকেই হয়তো বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেননি।

কিন্তু খুব দ্রুতই দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করে। তিনি শুধু প্রেসিডেন্টই হননি, বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এনেছেন এক বিশাল পরিবর্তন। গত দশ বছরে ট্রাম্পের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত ও তার প্রভাব আজও আমেরিকান সমাজে দৃশ্যমান।

প্রথম পরিবর্তনটি ছিল রিপাবলিকান পার্টির নীতিতে।

রক্ষণশীল রাজনীতির প্রবক্তা রোনাল্ড রিগানের দলটির আদর্শ থেকে সরে আসা ছিল উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

ট্রাম্পের সময়ে দলের মধ্যে নীতিগত পরিবর্তন আসে, যা আগে হয়তো দেখা যায়নি।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনটি হলো তথ্যের অবমূল্যায়ন।

ট্রাম্পের সময়ে মিথ্যা তথ্যের ছড়াছড়ি ছিল ব্যাপক।

অনেক ক্ষেত্রে, তাঁর দেওয়া ভুল তথ্যগুলো আর খবর হিসেবে গণ্যই করা হতো না।

ওয়াশিংটন পোস্টের হিসাব অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে তিনি ৩০,০০০ এর বেশি ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন, যা প্রতি ঘণ্টায় প্রায় একটি করে মিথ্যা বলার সমান।

তাঁর উপদেষ্টারাও মাঝে মাঝে ‘বিকল্প সত্য’ (alternative facts) ব্যবহারের কথা বলতেন, যা পরবর্তীতে একটি স্বাভাবিক প্রবণতায় পরিণত হয়।

তৃতীয় পরিবর্তনটি হলো ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিস্তার।

ট্রাম্পের রাজনৈতিক জীবনের শুরুই হয়েছিল প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্মস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলার মাধ্যমে।

এরপর তিনি বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সামনে এনেছেন।

তাঁর সমর্থকরাও সেই তত্ত্বগুলো গ্রহণ করতে শুরু করেন।

২০২০ সালের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ, গভীর রাষ্ট্র (deep state) নিয়ে আলোচনা, এমনকি অভিবাসীদের সম্পর্কে গুজব—এসব কিছুই দ্রুত দলের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা লাভ করে।

চতুর্থ পরিবর্তনটি ছিল ডেমোক্রেটিক পার্টির দুর্বলতা।

ট্রাম্পের সময়ে ডেমোক্রেটিক পার্টি নেতৃত্ব সংকটে পড়েছিল।

অনেক সময় তাদের সিদ্ধান্তগুলো ছিল দুর্বল এবং পুরনো ধ্যান-ধারণা থেকে বের হতে পারছিল না তারা।

এর ফলে ল্যাটিনো এবং কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভোটারের সমর্থন তারা হারাতে শুরু করে।

পঞ্চম পরিবর্তনটি হলো আইন প্রণয়নের দুর্বলতা এবং ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ।

ট্রাম্পের সময়ে কংগ্রেসের ক্ষমতা কমে যায়।

অনেক ক্ষেত্রে, আইন তৈরির পরিবর্তে, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে চলে যায়।

এই সময়ে কংগ্রেস কার্যত পাশ কাটিয়ে গেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে।

ষষ্ঠ পরিবর্তন হলো কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে ঝোঁক।

ট্রাম্পের সময়ে এমন একটি পরিবেশ তৈরি হয় যেখানে সরকার প্রধানের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার প্রবণতা বাড়ে।

বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, রিপাবলিকানদের মধ্যে অনেকে এখন বিচার বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়াতে চান।

সপ্তম পরিবর্তনটি হলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিকীকরণ।

ট্রাম্প তার দলের অনুগত একটি বলয় তৈরি করেন, যা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি করে।

গণমাধ্যম, বিচার ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান—সবকিছুকেই তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।

এমনকি, আদালতের রায়কেও তিনি অনেক সময় উপেক্ষা করেছেন।

অষ্টম পরিবর্তন হলো ভয়ের সংস্কৃতি।

ট্রাম্পের সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়েছে।

তাঁর বিরোধীদের মধ্যে অনেকে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন।

এমনকি, রাজনৈতিক সহিংসতার পক্ষে মত দেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে।

নবম পরিবর্তন হলো শিক্ষাগত বিভাজন।

ট্রাম্পের সময়ে শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন আরও স্পষ্ট হয়েছে।

শিক্ষিত মানুষেরা ডেমোক্রেটদের সমর্থন করেন, যেখানে অশিক্ষিত শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে রিপাবলিকানদের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

দশম পরিবর্তন হলো অভিবাসন ইস্যুর গুরুত্ব বৃদ্ধি।

ট্রাম্প অভিবাসনকে রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে আসেন।

তিনি অভিবাসীদের সম্পর্কে কঠোর মন্তব্য করেন এবং সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করেন।

এর ফলে অভিবাসন বিতর্ক আরও তীব্র হয় এবং এটি আমেরিকান রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পরিবর্তনগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে, যা দেশটির ভবিষ্যৎকে নতুন দিকে চালিত করছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *