জুন মাসের আগমন মানেই প্রকৃতির এক নতুন রূপ, দিনের আলোর ঝলমলে উপস্থিতি। প্রতি বছর এই সময়ে, উত্তর গোলার্ধে আসে বছরের দীর্ঘতম দিন, যা ‘গ্রীষ্মকালীন অয়নকাল’ বা ‘সামার সলস্টিস’ নামে পরিচিত।
তবে, গ্রীষ্মকালীন অয়নকালের ধারণাটি আমাদের বাংলাদেশের জন্য ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ? আসুন, জেনে নেওয়া যাক এই বিশেষ দিনটির আসল তাৎপর্য।
গ্রীষ্মকালীন অয়নকাল: প্রকৃতির এক বিশেষ মুহূর্ত
সাধারণভাবে, ২১শে জুন তারিখে (সময় অঞ্চলের কারণে এটি ২০শে জুনও হতে পারে) এই ঘটনাটি ঘটে থাকে। এই দিনে, সূর্য তার সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকে এবং উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকে থাকে, ফলে দিন সবচেয়ে দীর্ঘ এবং রাত সবচেয়ে ছোট হয়।
অন্যদিকে, দক্ষিণ গোলার্ধে এর বিপরীত অবস্থা দেখা যায়, সেখানে দিন ছোট এবং রাত বড় হতে শুরু করে।
এই অয়নকালের ধারণাটি বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ভিন্ন ভিন্নভাবে উদযাপন করা হয়। প্রাচীনকালে, মানুষ এই দিনটিকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করত এবং বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালন করত।
উদাহরণস্বরূপ, ইংল্যান্ডের স্টোনhenge-এর পাথরের স্থাপত্য গ্রীষ্মকালীন অয়নকালের সূর্যের আলো অনুসরণ করেই তৈরি করা হয়েছিল। এই দিনে সুইডেনে মিডসামার ইভ উদযাপন করা হয়, যেখানে মেপোল তৈরি করা হয়, লোকনৃত্য ও বিভিন্ন রোমান্টিক রীতি পালন করা হয়।
এছাড়া, পূর্ব ইউরোপের কিছু অংশে ইভান কুপালা নাইট পালন করা হয়, যেখানে মানুষজন বনফায়ারের চারপাশে জড়ো হয় এবং ফুলের মালা তৈরি করে পানিতে ভাসায়।
কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর গুরুত্ব কতটুকু?
বাংলাদেশ নিরক্ষরেখার কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায়, এখানে গ্রীষ্মকালীন অয়নকালের প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম অনুভূত হয়। আমাদের দেশে ঋতু পরিবর্তনের মূল কারণ হলো বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমের আগমন।
দিনের আলোর দৈর্ঘ্যের তেমন বড় কোনো পরিবর্তন এখানে দেখা যায় না, যেমনটা দেখা যায় উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে। উদাহরণস্বরূপ, ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে গ্রীষ্মকালে প্রায় ১৯ ঘণ্টা দিনের আলো থাকে, যেখানে আলাস্কার কিছু অংশে প্রায় ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত দিনের আলো দেখা যায়।
বিজ্ঞান কী বলে?
পৃথিবীর অক্ষ ২১.৫ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকার কারণে, গ্রীষ্মকালীন অয়নকালে উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে ঝুঁকে থাকে। ফলে, সূর্যের আলো সরাসরি এই অঞ্চলে বেশি সময় ধরে পড়ে এবং দিন বড় হয়।
নাসা (NASA) -র মতে, পৃথিবীর এই হেলানো অক্ষের কারণেই সারা বছর ধরে বিভিন্ন অঞ্চলে সূর্যের আলোর পরিমাণে ভিন্নতা দেখা যায়।
বিশ্বজুড়ে উদযাপন
গ্রীষ্মকালীন অয়নকাল শুধুমাত্র একটি প্রাকৃতিক ঘটনা নয়, এটি বিভিন্ন সংস্কৃতিতে উৎসবের উপলক্ষও বটে। এই দিনে যোগা দিবস পালন করা হয়, যা মানুষকে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হতে উৎসাহিত করে।
উপসংহার
গ্রীষ্মকালীন অয়নকাল একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্যোতির্বিজ্ঞানের ঘটনা, যা প্রকৃতির সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যের প্রতীক। যদিও বাংলাদেশের জন্য এর প্রভাব কম, তবে এটি আমাদের প্রকৃতির নিয়ম এবং পৃথিবীর পরিবর্তনের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এই দিনে, আমরা প্রকৃতির প্রতি সম্মান জানাতে পারি এবং দীর্ঘ দিনের আলো উপভোগ করতে পারি।
তথ্য সূত্র: CNN