যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রবেশাধিকারের ওপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। বোস্টনের একটি আদালত এই নিষেধাজ্ঞা আগামী ২৩শে জুন পর্যন্ত বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
সোমবার শুনানিতে বিচারক অ্যালিসন বারোজ এই সিদ্ধান্ত জানান। হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের করা একটি আবেদনের ওপর ভিত্তি করে তিনি এই নির্দেশ দেন।
আদালতে হার্ভার্ডের আইনজীবী জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ‘ঘুঁটি’ হিসেবে ব্যবহার করছেন। তারা আরও অভিযোগ করেন, প্রেসিডেন্ট মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চাইছেন, কারণ হার্ভার্ড প্রশাসন তার কিছু দাবি মেনে নেয়নি।
অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়, এই পদক্ষেপ জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, বিদেশি শিক্ষার্থীদের হোস্ট করার জন্য অন্য অনেক ভালো বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে বলেও তারা মনে করেন।
বিচারক বারোজের কাছে শুনানিতে হার্ভার্ডের আইনজীবী ইয়ান গার্শেগর্ন বলেন, “আমার মনে হয় না হার্ভার্ড কোনো দিক থেকে বিপজ্জনক।”
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই হার্ভার্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা রক্ষণশীলদের কিছু অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না।
এর জেরে ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের গবেষণা খাতে ২.৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান বন্ধ করে দেয়, ফেডারেল চুক্তি বাতিল করে এবং করমুক্তির সুবিধাও কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেয়।
বিষয়টি আরও জটিল হয় যখন হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে হার্ভার্ডের কাছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের কার্যকলাপ সম্পর্কিত তথ্যের একটি তালিকা চাওয়া হয়। হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা তালিকা জমা দিয়েছে।
তবে প্রশাসন জানায়, তাদের দেওয়া তথ্য পর্যাপ্ত নয়। এর ফলস্বরূপ, ২২শে মে তারিখে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হার্ভার্ডের ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম’-এর সনদ বাতিল করে দেয়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জানায়, এর ফলে তারা সেরা শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে এবং আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে তাদের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে সমস্যার সম্মুখীন হবে। তারা আরও জানায়, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছাড়া হার্ভার্ড, হার্ভার্ড থাকে না।
শুনানিতে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বিচার বিভাগের অ্যাটর্নি টিবেরিয়াস ডেভিস। তিনি জানান, গত দুই মাসে সরকার আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম খতিয়ে দেখেছে।
ডেভিস বলেন, “এই সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা হার্ভার্ডের হাতেই রয়েছে।”
আদালতে বিচারক বারোজ মন্তব্য করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে শুনানিতে একজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন, যেখানে হার্ভার্ডের পক্ষে ছিলেন ছয়জন আইনজীবী।
হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার এর আগে জানিয়েছিলেন, তারা অ্যান্টি-সেমিটিজম বা ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। তবে ফেডারেল সরকারের নির্দেশ সত্ত্বেও তারা তাদের ‘মূল, আইনগতভাবে সুরক্ষিত নীতি’ থেকে সরে আসবেন না।
এই ঘটনার জেরে বিদেশি শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে যারা হার্ভার্ডে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক, তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তবে, আদালতের এই স্থগিতাদেশ তাদের জন্য কিছুটা স্বস্তি এনেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন