গুইয়ানা: প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমি, ছবি শিকারিদের স্বর্গরাজ্য
দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত গুইয়ানা, যেন এক অচেনা সৌন্দর্যের ভান্ডার। সবুজ বনভূমি আর জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই দেশ এখন প্রকৃতি প্রেমী ও আলোকচিত্রশিল্পীদের কাছে নতুন আকর্ষণ। বিশেষ করে যারা সাধারণ পর্যটকদের ভিড় এড়িয়ে প্রকৃতির গভীরে হারিয়ে যেতে চান, গুইয়ানা তাদের জন্য এক আদর্শ গন্তব্য।
গুইয়ানার প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকা জুড়ে রয়েছে আদিম বৃষ্টিবন। এই বনভূমি ৮২০-এর বেশি প্রজাতির পাখির আবাসস্থল, রয়েছে ৩২০ প্রজাতির সরীসৃপ ও উভচর প্রাণী, এবং ২২৮ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। এখানকার জাতীয় পশু জাগুয়ার সহ আরও অনেক বন্যপ্রাণী দেখা যায় এখানে। এছাড়াও, ৮ হাজারের বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে, যা প্রতিনিয়ত প্রকৃতিবিদদের গবেষণার বিষয়।
গুইয়ানার আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কাইয়েটিয়ুর জলপ্রপাত। এটি বিশ্বের বৃহত্তম একক জলপ্রপাত, যার উচ্চতা ৭৪১ ফুট। এর বিশালতা এতটাই যে, এটি যেন প্রকৃতির এক বিস্ময়।
পর্যটকদের জন্য গুইয়ানায় এখনো উন্নত অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি, তবে এখানকার ইকো-ট্যুরিজম বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের তত্ত্বাবধানে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা ও গাইড-এর ব্যবস্থা করা হয়। এর ফলে পর্যটকদের অর্থ সরাসরি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছায়, যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সাহায্য করে।
যুক্তরাষ্ট্রের কিছু শহর থেকে গুইয়ানার রাজধানী জর্জটাউনে সরাসরি ফ্লাইট পাওয়া যায়, যা ভ্রমণকে আরও সহজ করে তোলে। এখানকার সরকারি ভাষা ইংরেজি হওয়ায় বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও কোনো অসুবিধা হয় না।
তবে, গুইয়ানায় ভ্রমণের কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এখানকার আবাসন ব্যবস্থা খুব সাধারণ মানের, রাস্তাঘাট উন্নত নয়, এবং পোকামাকড়ের উপদ্রবও বেশ বেশি। যারা বিলাসবহুল জীবনযাত্রা পছন্দ করেন, তাদের জন্য হয়তো গুইয়ানা আদর্শ স্থান নয়। কিন্তু যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন, স্থানীয় সংস্কৃতি ও মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে চান, তাদের জন্য গুইয়ানা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে।
একজন আলোকচিত্রী, যিনি পেশাগত কারণে প্রায়ই বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন, গুইয়ানার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি জানান, গভীর রাতে ফোটা পদ্ম ফুলের ছবি তোলার অভিজ্ঞতা ছিল তার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত। এছাড়াও, বনের গভীরে বিভিন্ন ধরনের প্রাণী ও উদ্ভিদের সহাবস্থান তাকে বিস্মিত করেছে। গুইয়ানার প্রকৃতি যেন এক জীবন্ত জাদুঘর, যা ছবি তোলার মাধ্যমে ফ্রেমবন্দী করার মতো।
গুইয়ানায় ইকো-ট্যুরিজমের ধারণা বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে প্রকৃতির সংরক্ষণ ও পর্যটনের উন্নয়ন একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। এতে একদিকে যেমন প্রকৃতির সৌন্দর্য রক্ষা করা যায়, তেমনি স্থানীয় মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও নিশ্চিত হয়।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল এন্ড লেজার