ডায়াবেটিসের ওষুধ কি স্মৃতিভ্রংশতা রুখতে পারে? নতুন গবেষণায় তেমনই ইঙ্গিত!
বাংলাদেশে দ্রুত বাড়ছে প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ছে স্মৃতিভ্রংশতা বা ডিমেনশিয়ার (Dementia) মতো স্নায়ু-সংক্রান্ত রোগের প্রকোপ।
স্মৃতিভ্রংশতা একটি জটিল রোগ, যা মানুষের স্মৃতিশক্তি, চিন্তাভাবনা এবং দৈনন্দিন কাজকর্মের ওপর প্রভাব ফেলে। উদ্বেগের বিষয় হল, এই রোগের এখনো পর্যন্ত কোনো নিরাময় নেই।
তবে সম্প্রতি কিছু গবেষণায় এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে, ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধ হয়তো এই রোগের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে।
গবেষণাগুলোতে মূলত ‘জিএলপি-১ অ্যাগোনিস্ট’ (GLP-1 agonist) শ্রেণির ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। এই শ্রেণির ওষুধগুলো মূলত টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং ওজন কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
ওজেম্পিক (Ozempic), ওয়েগোভি (Wegovy) এবং মাউন্জারো (Mounjaro)-এর মতো ওষুধগুলো এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এজিং-এর (National Institute of Aging) নিউরোসায়েন্টিস্ট ইয়াঝাউ লি-র (Yazhou Li) নেতৃত্বে হওয়া একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ইঁদুরের শরীরে এই ওষুধ প্রয়োগের ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোর প্রদাহ কমেছে এবং তাদের স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়েছে।
ইঁদুরগুলো আগের চেয়ে দ্রুতগতিতে ধাঁধা সমাধান করতে পারছিল।
ডায়াবেটিস এবং স্মৃতিভ্রংশতার মধ্যে সম্পর্ক বেশ গভীর। আমাদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকারিতার জন্য ইনসুলিন (Insulin) অপরিহার্য।
ইনসুলিন মস্তিষ্কের কোষগুলোর বৃদ্ধি, মেরামত এবং শক্তি ব্যবহারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়, ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে।
এই কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্মৃতিভ্রংশতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। রুথজার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (Rutgers University) গবেষক মিশেল স্নেইডার বেইরি (Michal Schnaider Beeri) দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের পুরুষদের ওপর একটি গবেষণা চালিয়েছেন।
তিনি দেখেছেন, মধ্যবয়সে যাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে, তাদের স্মৃতিভ্রংশতার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি ছিল।
জিএলপি-১ অ্যাগোনিস্ট ওষুধগুলো মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীল করে তোলে। ফলে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত হতে পারে এবং স্মৃতিভ্রংশতার ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
এই ওষুধগুলো মস্তিষ্কের প্রদাহ কমায় এবং কোষগুলোর সংযোগ (synapses) রক্ষা করতে সাহায্য করে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ওজেম্পিকের মতো ওষুধ সেবনকারী ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে স্মৃতিভ্রংশতার ঝুঁকি কিছুটা কমেছে।
উদাহরণস্বরূপ, এলিলি (Eli Lilly) নামক একটি সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত একটি গবেষণায় (REWIND) দেখা গেছে, ডুল্লুটাাইড (dulaglutide) নামক একটি ওষুধ হালকা স্মৃতিবৈকল্য (mild cognitive impairment) রোগীদের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সাহায্য করেছে।
তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনো এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন। এই ওষুধগুলো কীভাবে কাজ করে এবং কাদের জন্য এটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এছাড়া, সুস্থ মানুষের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এই ওষুধ ব্যবহারের কোনো সুপারিশ এখনো করা হয়নি। কারণ, এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও (side-effects) রয়েছে, যেমন – বমি বমি ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি।
এমনকি কিছু ক্ষেত্রে প্যানক্রাইটিস (pancreatitis) বা হঠাৎ করে দৃষ্টিশক্তির সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ওষুধগুলো স্মৃতিভ্রংশতার চিকিৎসায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। তবে, এর কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আরও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন।
তাই, কোনো ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বাংলাদেশে স্মৃতিভ্রংশতা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।
তাই, এই ধরনের গবেষণা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক