মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রিপাবলিকান দলের সদস্যরা কর কর্তনের একটি বিশাল পরিকল্পনা করছেন। তাদের দাবি, এর ফলে দেশটির অর্থনীতি দ্রুতগতিতে বেড়ে যাবে।
তাদের এই পরিকল্পনাটিকে ‘বিশাল, সুন্দর বিল’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। তবে অনেক অর্থনীতিবিদ এই বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
তাদের মতে, এই বিলটি সম্ভবত কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক উন্নতি এনে দিতে পারবে না। বরং এর ফল হতে পারে ভিন্ন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রস্তাবিত এই বিলটি সম্ভবত তেমন শক্তিশালী হবে না, যেমনটা তারা বলছেন। বরং এটি ২০১৬ সালের কর হ্রাসের আইনের চেয়েও দুর্বল হতে পারে।
যদিও সেই আইনের অর্থনৈতিক প্রভাব এখনো পুরোপুরি বোঝা যায়নি। এই বিলের মূল উদ্দেশ্য হল, বর্তমানে বিদ্যমান ব্যক্তিগত কর হ্রাস আইন, যা এই বছরের শেষে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার কথা, সেটিকে বাড়ানো।
এই বিলে কিছু অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে, যেমন—শিশু করের ক্ষেত্রে চার বছরের জন্য কিছু ছাড় এবং কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স সম্পূর্ণভাবে মওকুফ করার প্রস্তাব।
তবে কর্পোরেট ট্যাক্সের ক্ষেত্রে এই বিলে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়নি। যদিও সিনেটে এই বিলের কিছু অংশ প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে কিছু কর সুবিধা স্থায়ী করার কথা বলা হয়েছে।
এর ফলে বিলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কিছুটা বাড়তে পারে, তবে এর খরচও বাড়বে। এই বিলের দুর্বলতা হল, এতে কর্পোরেট ট্যাক্স হ্রাসের স্থায়ী ব্যবস্থা নেই, যা অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের জন্য জরুরি বলে মনে করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো হতো, তাহলে তা অর্থনীতির বৃদ্ধিতে সহায়ক হতো। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা এই বিলের অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন পূর্বাভাস দিয়েছে।
ট্যাক্স ফাউন্ডেশনের মতে, এই বিলটি আগামী ৩০ বছরে অর্থনীতির সামান্য ০.৮ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। অন্যদিকে, পেন-হোয়ার্টন বাজেট মডেলের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩৪ সাল পর্যন্ত এই বিলের কারণে অর্থনীতিতে ০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি হতে পারে।
তবে একই সময়ে দেশটির বাজেট ঘাটতি অনেক বেড়ে যাবে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কুশ দেসাইয়ের মতে, সমালোচকরা ট্রাম্পের আগের কর হ্রাসের বিষয়েও একই ধরনের নেতিবাচক পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, কিন্তু সেই সময়ে অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছিল।
তবে, কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস (সিবিও) এখনো এই বিলের অর্থনৈতিক প্রভাবের মূল্যায়ন প্রকাশ করেনি। সিবিও’র একটি পৃথক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই বিলের কারণে এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ২.৪ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
সিনেটে এই বিলের কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কর্পোরেট ট্যাক্স সুবিধাগুলো স্থায়ী করা হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানো যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সরঞ্জাম এবং গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য অস্থায়ী কর সুবিধাগুলো স্থায়ী করলে এর খরচ বাড়বে, তবে এটি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করা এবং কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোর পরিবর্তে ভর্তুকি দেওয়া হলে তা অর্থনীতির জন্য বেশি কার্যকর হবে। এর ফলে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে।
এক্ষেত্রে, যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিগুলো বাংলাদেশের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে। কারণ, কোনো দেশের কর নীতি সেই দেশের অর্থনীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
কর হ্রাসের ফলে যদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি না হয়, তাহলে তা জাতীয় ঋণ বাড়িয়ে দিতে পারে এবং অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। তথ্য সূত্র: সিএনএন