ভুলে যাওয়ার ক্ষমতা: স্মৃতি দুর্বল করার উপায়!

স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য আমরা কত কিছুই না করি, কিন্তু ভুলে যাওয়াটাও যে একটা জরুরি দক্ষতা, সে কথা কি কখনও ভেবেছেন? সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভুলে যাওয়াটা আসলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অপ্রয়োজনীয়, পুরোনো, এমনকি বেদনাদায়ক স্মৃতিগুলো ঝেড়ে ফেলার ক্ষমতা আমাদের থাকা দরকার। কগনিটিভ বিজ্ঞানীরা (cognitive scientists) বলছেন, ইচ্ছাকৃতভাবেও কিছু স্মৃতিকে ভোলা সম্ভব।

আপনি হয়তো শুনে থাকবেন, কেউ যদি দ্রুত কোনো সংখ্যা মুখস্থ করতে পারেন, তাহলে তাঁর স্মৃতিশক্তি অসাধারণ। কিন্তু অতিরিক্ত স্মৃতিশক্তি সব সময় ভালো নাও হতে পারে।

যেমন ধরুন, রাশিয়ার সাংবাদিক সলোমন শেরেশেভস্কির (Solomon Shereshevsky) কথা। তিনি এত দ্রুত সবকিছু মনে রাখতে পারতেন যে তাঁর পক্ষে মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ত।

অনেক সময় তিনি স্মৃতিগুলো ভুলতে চাইতেন, কিন্তু পারতেন না।

তাহলে, ভুলে যাওয়াটা কেন এত জরুরি? বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের মস্তিষ্ক সব সময়ই কিছু তথ্যকে গুরুত্ব দেয়, আর কিছুকে দেয় না।

যে তথ্যগুলো আমাদের প্রয়োজন নেই, সেগুলো ধীরে ধীরে আমরা ভুলে যাই। আবার, কোনো ঘটনার স্মৃতি যদি সময়ের সঙ্গে দুর্বল হয়ে যায়, অথবা নতুন কোনো স্মৃতি পুরনো স্মৃতির সঙ্গে মিশে যায়, তাহলেও আমরা ভুলে যাই।

কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমরা চাইলে কিছু স্মৃতিকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলতে পারি। একে বলা হয় ‘অনুপ্রাণিত বিস্মৃতি’ (motivated forgetting)।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি হয়তো কোনো বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন এবং সেখানে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল। আপনি যদি সেই ঘটনাগুলো নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করা বন্ধ করে দেন, তাহলে ধীরে ধীরে সেই স্মৃতিগুলো দুর্বল হয়ে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের (The University of Cambridge) একজন কগনিটিভ মনোবিজ্ঞানী, মাইকেল অ্যান্ডারসন (Michael Anderson) ‘থিংক/নো-থিংক’ (think/no-think) নামে একটি পরীক্ষা করেছেন।

এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের কিছু শব্দজোড়া মনে রাখতে বলা হয়েছিল। এরপর তাদের একটি শব্দ দেখালে অন্য শব্দটি মনে করতে বা না করতে বলা হতো। দেখা গেছে, যারা চেষ্টা করে শব্দটি মনে রাখতে চাননি, তাদের ক্ষেত্রে সেই শব্দ সম্পর্কিত স্মৃতি দুর্বল হয়ে গেছে।

২০২৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এই কৌশল ব্যবহার করে কোভিড-১৯ (COVID-19) অতিমারি সম্পর্কিত উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করা সম্ভব। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের কিছু উদ্বেগজনক স্মৃতি মনে করতে দেওয়া হয়েছিল, যেমন – হাসপাতালে স্বজনের সঙ্গে দেখা করার স্মৃতি।

এরপর তাদের হয় সেই স্মৃতিগুলো মনে করতে, না হয় এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছিল। তিন দিনের প্রশিক্ষণ শেষে, যারা স্মৃতিগুলো এড়িয়ে যেতে শিখেছিলেন, তাদের মধ্যে উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার (depression) লক্ষণ কমে আসে।

স্মার্টফোন (smartphone) আমাদের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে, কিন্তু এটি আমাদের স্মৃতিশক্তির উপরও প্রভাব ফেলে। অনেক সময়, পুরোনো ছবি বা ঘটনা আমাদের ফোনে ভেসে ওঠে, যা আমরা হয়তো ভুলেই গিয়েছিলাম।

আবার, কিছু ঘটনা, যা আমরা মনে রাখতে চাই, তা হয়তো আমাদের ফোন দেখায় না। তাই, আমাদের ভুলে যাওয়ার ক্ষমতাকে আরও শাণিত করতে হবে।

সুতরাং, স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি, ভুলে যাওয়ার কৌশলগুলোও আমাদের জানা দরকার। কারণ, এটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, সৃজনশীলতা বাড়াতে এবং নিজেদের সম্পর্কে নতুন ধারণা তৈরি করতে সাহায্য করে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *