মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য: একটি খাদ্য যা আপনাকে সাত বছর পর্যন্ত “তরুণ” রাখতে পারে!
বার্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন হন। বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে স্মৃতিভ্রংশতা বা ডিমেনশিয়ার হারও বাড়ছে, যা উদ্বেগের একটি বড় কারণ।
গবেষণা বলছে, ২০৬০ সাল নাগাদ শুধু আমেরিকাতেই ডিমেনশিয়া আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করে আমরা আমাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে রক্ষা করতে পারি এবং বার্ধক্যের প্রক্রিয়াকে ধীর করতে পারি।
এই প্রসঙ্গে, ‘MIND’ ডায়েটের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এটি এমন একটি খাদ্য তালিকা যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়ক।
২০১৫ সালে, বিজ্ঞানীরা খাদ্য এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতার ওপর গবেষণা করে এই ডায়েট তৈরি করেন। এই ডায়েট মূলত মেডিটারিয়ান এবং DASH (Dietary Approaches to Stop Hypertension) ডায়েটের একটি মিশ্রণ। এটিতে প্রচুর পরিমাণে ফল, সবজি, শস্য এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট অন্তর্ভুক্ত থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা MIND ডায়েট অনুসরণ করেন, তাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা অন্যদের তুলনায় ভালো থাকে। এমনকি, এই ডায়েট অনুসরণকারীরা তাদের মস্তিষ্কের বয়সকে ৭.৫ বছর পর্যন্ত “কম” রাখতে পারেন।
অর্থাৎ, তাদের মস্তিষ্ক অন্যদের তুলনায় ৭.৫ বছর পর্যন্ত “তরুণ” থাকতে পারে।
এই ডায়েট আলঝাইমার’স রোগ এবং ডিমেনশিয়ার বিরুদ্ধেও সুরক্ষা দিতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা MIND ডায়েট অনুসরণ করেছেন, তাদের মধ্যে আলঝাইমার’স রোগের ঝুঁকি কম ছিল।
এমনকি, যারা মাঝারিভাবে এই ডায়েট মেনে চলেছেন, তাদেরও উপকার হয়েছে।
তাহলে, এই ডায়েটের মূল উপাদানগুলো কী?
MIND ডায়েটে রয়েছে প্রচুর সবুজ শাকসবজি, যেমন পালং শাক, লেটুস এবং অন্যান্য সবুজ পাতাযুক্ত সবজি। এছাড়াও, বিভিন্ন ধরনের বেরি, যেমন স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, রাস্পবেরি ইত্যাদি এই ডায়েটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বাদাম, জলপাই তেল, শস্য, এবং মাছ ও মুরগির মাংসও এই ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত।
যেসব খাবার বাদ দিতে হবে:
এই ডায়েটে ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, লাল মাংস, প্রক্রিয়াজাত মাংস, মাখন ও মার্জারিন, মিষ্টি ও ভাজা খাবার ত্যাগ করতে বলা হয়।
মস্তিষ্কের জন্য উপকারী এই খাদ্যাভ্যাস কীভাবে কাজ করে?
MIND ডায়েটের খাবারগুলো মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। সবুজ শাকসবজি এবং বেরির মতো খাবারে ফ্ল্যাভোনয়েডস নামক উপাদান থাকে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহরোধী হিসেবে কাজ করে।
মাছ, বিশেষ করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ, মস্তিষ্কের কোষকে রক্ষা করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ডায়েট শুধু বয়স্কদের জন্য নয়, বরং সব বয়সের মানুষের জন্যই উপকারী। অল্প বয়সী এবং শিশুদের জন্যও এটি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই ডায়েট:
আমাদের দেশেও এই ডায়েট অনুসরণ করা সম্ভব।
এখানকার স্থানীয় ফল ও সবজি, যেমন- পেয়ারা, আমলকী, জাম্বুরা, বিভিন্ন ধরনের শাক, বাদামের মধ্যে কাঠবাদাম ও কাজুবাদাম ইত্যাদি MIND ডায়েটের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে।
রান্নার জন্য জলপাই তেলের বদলে সরিষার তেল বা সয়াবিন তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
মাছ আমাদের খাদ্য তালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা এই ডায়েটের জন্য খুবই উপযোগী।
সুতরাং, সুস্থ থাকতে এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, MIND ডায়েট একটি চমৎকার উপায় হতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা সবাই আমাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে পারি।
এই নিবন্ধটি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এবং অন্যান্য নির্ভরযোগ্য গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে।