সিনথেটিক রং: খাদ্য তালিকা থেকে রং সরানোর সিদ্ধান্ত, ভোক্তাদের স্বস্তি?

খাবার প্রস্তুতকারক বহুজাতিক সংস্থা ক্রাফট হেইঞ্জ তাদের খাদ্য সামগ্রী থেকে ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ সব ধরনের কৃত্রিম রং সরিয়ে ফেলবে। সম্প্রতি তারা এই ঘোষণা দিয়েছে। ভোক্তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি।

শুধু তাই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)-এর পক্ষ থেকেও খাদ্য দ্রব্যে ব্যবহৃত রংয়ের বিষয়ে নতুন করে নজরদারি চালানো হচ্ছে।

কোম্পানিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা তাদের খাদ্য সামগ্রীতে কৃত্রিম রংয়ের ব্যবহার বন্ধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর অংশ হিসেবে, ২০২৭ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া তাদের সব পণ্য থেকে সিনথেটিক ফুড কালার বা কৃত্রিম রং অপসারণ করা হবে।

ক্রাফট হেইঞ্জ-এর পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে নতুন করে কোনো পণ্যে এই ধরনের রং ব্যবহার করবে না।

কোম্পানিটির নর্থ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পেদ্রো নাভিও এক বিবৃতিতে জানান, “আমাদের বেশিরভাগ পণ্যে প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করা হয় অথবা কোনো রং ব্যবহার করা হয় না। আমরা ধীরে ধীরে আমাদের খাদ্য তালিকা থেকে কৃত্রিম রংয়ের ব্যবহার কমাচ্ছি।”

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে কোম্পানিটি তাদের ‘ক্রাফট ম্যাক অ্যান্ড চিজ’ থেকে কৃত্রিম রং অপসারণ করে।

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা ও সরকারের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত রংয়ের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে ক্যানসার এবং স্নায়ু সম্পর্কিত সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) সম্প্রতি খাদ্য, পানীয় এবং ওষুধে ‘রেড ডাই নম্বর ৩’-এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। শুধু তাই নয়, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে খাদ্য সরবরাহ থেকে পেট্রোলিয়াম-ভিত্তিক সিনথেটিক রং পর্যায়ক্রমে সরিয়ে ফেলার জন্য তারা প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনা করছে।

খাদ্য পণ্যে কৃত্রিম রং ব্যবহারের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া, ভার্জিনিয়া এবং ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া-সহ যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকের বেশি রাজ্যে খাদ্যদ্রব্যে কৃত্রিম রং এবং কিছু অ্যাডিটিভের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার চেষ্টা চলছে।

এই পরিবর্তনের পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল ভোক্তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাবারের চাহিদা বৃদ্ধি। বর্তমানে অনেক গ্রাহক স্বাস্থ্যকর বিকল্পের দিকে ঝুঁকছেন, যার ফলে ক্রাফট হেইঞ্জের জনপ্রিয় কিছু পণ্যের বিক্রি কমে গেছে।

গত প্রান্তিকে কোম্পানিটির বিক্রি ৬.৪ শতাংশ কমেছে। ব্যবসার এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে এবং বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নিজেদের টিকিয়ে রাখতে কৌশলগত পরিবর্তনের কথা ভাবছে ক্রাফট হেইঞ্জ।

খাদ্য নিরাপত্তা এবং খাদ্য দ্রব্যের গুণগত মান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এমন পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশেও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সচেতনতা বাড়ছে, এবং খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত রং এবং অন্যান্য উপাদান নিয়ে আলোচনা বর্তমানে বেশ প্রাসঙ্গিক।

খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআই (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন)-এর এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *