আজকাল কর্মজীবনের ছবিটা যেন একটু অন্যরকম হয়ে গেছে। অফিসের সময় পেরিয়ে গেলেও যেন কাজ শেষ হতে চায় না অনেকের।
মাইক্রোসফটের একটি নতুন গবেষণা বলছে, রাত আটটা বা তার পরের মিটিংয়ের সংখ্যা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে ইমেইল আর মেসেজের আনাগোনা। কর্মীদের জীবন যেন ‘অসীম কর্মদিবসে’ পরিণত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, গত এক বছরে রাত আটটা থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত মিটিংয়ের সংখ্যা ১৬ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষ করে, বিভিন্ন ভৌগোলিক অবস্থানে থাকা দল এবং নমনীয় কাজের সুযোগ আছে এমন কর্মীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।
গবেষণায় আরও জানা গেছে, একজন কর্মী সাধারণত দিনের আট ঘণ্টার কর্মঘণ্টায় প্রতি দু’মিনিট পরপর মিটিং, ইমেইল বা চ্যাট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে কাজের মধ্যে বাধা পান। হিসাব করলে, দিনে প্রায় ২৭৫ বার তাদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে।
আর ছুটির পরেও যেন এই বার্তা আদান-প্রদান চলতেই থাকে। গবেষণাকালে, কর্মীরা তাদের নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বাইরে গড়ে ৫৮টি বার্তা আদান-প্রদান করেছেন, যা গত বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি।
গড়ে একজন কর্মী প্রতিদিন প্রায় ১১৭টি ইমেইল পান। রাত ১০টার মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কর্মী তাদের ইনবক্সে ফিরে আসেন।
মাইক্রোসফটের মতে, আধুনিক কর্মদিবসের যেন কোনো নির্দিষ্ট শুরু বা শেষ নেই। ব্যবসার চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মীদের কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করা হচ্ছে।
ফলে, কাজের মনোযোগ বা বিশ্রাম নেওয়ার সময় কমে যাচ্ছে, যা তাদের জন্য একটা বাড়তি চাপ তৈরি করছে। যেন মনে হচ্ছে, প্রতিবার বাইক চালানোর আগে তা তৈরি করতে হচ্ছে।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, মাইক্রোসফটের একটি জরিপে অংশ নেওয়া কর্মীদের এক-তৃতীয়াংশ গত পাঁচ বছরে কাজের গতি বজায় রাখতে ‘অসম্ভব’ অনুভব করেছেন।
প্রতিটি ইমেইল বা বার্তার শব্দ হয়তো ছোট, কিন্তু একসঙ্গে তারা দিনের গতি বাড়িয়ে তোলে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, মিটিংয়ের অর্ধেক সময় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা এবং দুপুর ১টা থেকে ৩টার মধ্যে হয়। এই সময়ে মানুষের স্বাভাবিক উৎপাদনশীলতা বেশি থাকে।
মাইক্রোসফট বলছে, মিটিংয়ে অতিষ্ঠ বস এবং সহকর্মীরা কর্মীদের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়। অনেক সময় কর্মীরা তাদের কাজ শেষ করতে না পেরে সপ্তাহান্তে তা করেন।
অবশ্য, কর্মীদের কাজের চাপ কমাতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। প্রযুক্তিটি কর্মীদের কম গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কাজগুলো করতে সহায়তা করতে পারে, যা তাদের মূল্যবান কাজ করার জন্য সময় দেবে।
তবে, এআইয়ের উত্থান কর্মীদের মধ্যে তাদের চাকরি হারানোর উদ্বেগও বাড়িয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের একটি জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৪১ শতাংশ কোম্পানি এআইয়ের মাধ্যমে কিছু কাজ স্বয়ংক্রিয় করার কারণে তাদের কর্মী সংখ্যা কমানোর পরিকল্পনা করছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন