ভবিষ্যতে হয়তো দ্রুতগামী বিমানের যুগে প্রবেশ করতে চলেছে বিশ্ব। সম্প্রতি, শব্দ-তরঙ্গকে অতিক্রম করে চলা বিমানের ওড়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা ভাবছে আমেরিকা। এর ফলে, কনকর্ড বিমানের পর এবার হয়তো আকাশে উড়বে শব্দ-তরঙ্গকে জয় করা সুপারসনিক বিমান।
এমনটাই জানা যাচ্ছে। জানা গেছে, আমেরিকাতে এখন এমন কিছু সুপারসনিক বিমান তৈরির কাজ চলছে, যা শব্দের চেয়েও দ্রুত গতিতে উড়তে সক্ষম।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘বুম সুপারসনিক’-এর তৈরি করা ‘ওভারচার’ বিমান। যদিও এই ধরনের বিমান তৈরি করা এবং আকাশে ওড়ানো বেশ কঠিন।
কারণ, এর সঙ্গে রয়েছে একাধিক জটিলতা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুপারসনিক বিমান তৈরি এবং তা চালু করার পথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ।
প্রচলিত বিমানের তুলনায় এই ধরনের বিমানগুলিতে ২ থেকে ৩ গুণ বেশি জ্বালানি খরচ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও, টিকিটের উচ্চ মূল্যও একটি বড় সমস্যা।
উদাহরণস্বরূপ, নিউইয়র্ক থেকে লন্ডনগামী বিমানের বর্তমান টিকিটের দামের চেয়ে সুপারসনিক বিমানের টিকিট ৩৮ শতাংশ বেশি হতে পারে।
তবে, এইসব চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বিমান সংস্থাগুলি এই ধরনের বিমানের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। যদিও এই বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি এখনো পর্যন্ত নির্দিষ্ট নয়।
কারণ, অনেক বিমান সংস্থাই তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় এই ধরনের বিমানের কথা উল্লেখ করেনি।
এই প্রসঙ্গে ‘বুম সুপারসনিক’-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্লেক স্কল বলেন, “আমাদের জন্য এটা খুবই উৎসাহজনক বছর।” তিনি আরও জানান, ২০২৮ সালের মধ্যে ওভারচার বিমান আকাশে ওড়ানোর এবং তার এক বছর পর বিমান সংস্থাগুলির হাতে এটি তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সময়সীমা বেশ কঠিন।
অন্যদিকে, এই বিমান তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দেওয়াটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওভারচার তৈরি করতে প্রায় ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন।
তবে, বুম সুপারসনিক এখনো পর্যন্ত প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে পেরেছে। যদিও ব্লেক স্কল জানিয়েছেন, তারা ২ বিলিয়ন ডলারের কম খরচে এই কাজ করতে সক্ষম হবেন।
বিমান প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি বর্তমানে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)-এর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কারণ, তাদের নিয়ম অনুযায়ী বিমানের নিরাপত্তা পরীক্ষা এবং ছাড়পত্র পাওয়া একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া।
বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়ায় বেশ সময় লেগেছিল।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এখন আর আগের মতো সরাসরি যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা নেই। ভিডিও কলের মাধ্যমে এখন অনেক কাজ করা যায়।
তাই, সুপারসনিক বিমানের চাহিদা কতটুকু বাড়বে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
তবে, ব্লেক স্কল আশাবাদী যে, সবকিছু ঠিকঠাক চললে এই বিমান পরিষেবা সফল হবে। তার মতে, “প্রযুক্তি রয়েছে, বাজার রয়েছে, যাত্রী এবং বিমান সংস্থাগুলিও রয়েছে।
শুধু সময়ের অপেক্ষা।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন