যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবীর জীবন: অভিবাসী শিশুদের অধিকার রক্ষার সংগ্রাম
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ব্যবস্থা বর্তমানে বেশ কঠিন সময় পার করছে। বিশেষ করে, অভিভাবকহীন শিশুদের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল। সম্প্রতি, অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী রালফ এনরিকেজ-এর একটি সাক্ষাৎকারে এই কঠিন বাস্তবতার চিত্র ফুটে উঠেছে।
তিনি লস অ্যাঞ্জেলেস ভিত্তিক সংস্থা ‘আল ওট্রো লাডো’-র হয়ে কাজ করেন, যা অভিবাসী শিশুদের আইনি ও মানবিক সহায়তা দিয়ে থাকে।
এনরিকেজ-এর মতে, অভিবাসন বিষয়ক আইনগুলি জটিল এবং পরিবর্তনের কারণে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার করার ফলে অনেক পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, এবং শিশুদের জন্য আশ্রয় পাওয়া আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, শিশুদের আইনি সহায়তা দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
আল ওট্রো লাডো-র ‘আনঅ্যাকম্পানিড চিলড্রেন প্রোগ্রাম’-এর প্রধান হিসেবে রালফ এনরিকেজ-এর প্রধান কাজ হলো, অভিভাবকহীন শিশুদের আইনি সহায়তা দেওয়া। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে, তারা শিশুদের হয়ে আদালতে লড়াই করেন, তাদের আশ্রয় লাভের জন্য আবেদন করেন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেন।
একটি শিশুর মামলা শুরু থেকে শেষ হতে সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে, যা অনেক সময় শিশুদের জন্য মানসিক চাপ তৈরি করে।
এনরিকেজ আরও জানান, তাদের আইনজীবীদের প্রতিদিনের কাজগুলো বেশ কঠিন। শিশুদের সঙ্গে কথা বলা, তাদের মামলার প্রস্তুতিতে সহায়তা করা, আদালতের জটিলতাগুলো বুঝিয়ে বলা—এসবের বাইরেও তাদের ক্লায়েন্টদের মানসিক স্বাস্থ্যর দিকেও খেয়াল রাখতে হয়। অনেক সময় শিশুদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কারণে আইনজীবীদেরও মানসিক আঘাত পেতে হয়।
বর্তমানে, ট্রাম্প প্রশাসনের সময় অভিবাসন আইন আরও কঠোর হওয়ায় আইনজীবীদের কাজ আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবার এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে, কারণ তাদের সবসময় গ্রেফতার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এর ফলে, শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারি অনুদান কমে যাওয়ায় অনেক আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
এনরিকেজ মনে করেন, অভিবাসন প্রক্রিয়ার জটিলতা সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। বিশেষ করে, শিশুদের জন্য এই প্রক্রিয়াটি আরও কঠিন। তিনি বলেন, “একজন ৭ বছর বয়সী, ১০ বছর বয়সী বা ১৮ বছর বয়সী শিশুর পক্ষে একা আদালতে লড়াই করা খুবই কঠিন। তাদের একজন আইনজীবীর সহায়তা নেওয়া অপরিহার্য।
এই কঠিন সময়েও, এনরিকেজ-এর মতো আইনজীবীরা অভিবাসী শিশুদের অধিকার রক্ষায় অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো, শিশুদের একটি নিরাপদ জীবন দেওয়া এবং তাদের আইনি অধিকার নিশ্চিত করা। তিনি মনে করেন, একজন অভিবাসী হিসেবে ভাষার সমস্যা এবং প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার লড়াইটা তিনি ভালোভাবেই বোঝেন। তাই, এই শিশুদের পাশে দাঁড়ানোটা তার কাছে মানবিক দায়িত্বের অংশ।
বর্তমানে অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা এবং তাদের অধিকার রক্ষা করা। এনরিকেজ মনে করেন, “আইনজীবীর সহায়তা ছাড়া অভিবাসন প্রক্রিয়ায় শিশুদের টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব।
তথ্য সূত্র: সিএনএন