যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলীয় অঞ্চলে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে, এমনটাই উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়। গবেষণায় দেখা গেছে, এই অঞ্চলের পানিতে থাকা ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা (microplastics) মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ও হৃদরোগের মতো গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে।
পরিবেশ দূষণের এই মারাত্মক প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলীয় এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য ও সেখানকার সমুদ্রের পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের ঘনত্বের ওপর ভিত্তি করে। বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের পানিতে প্লাস্টিকের পরিমাণ এবং ঐ এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যগত অবস্থার মধ্যে একটি সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন।
যাদের আশেপাশে সমুদ্রের পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেশি ছিল, তাদের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিস, স্ট্রোক এবং করোনারি আর্টারি ডিজিজ বা হৃদরোগের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা গেছে।
ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আসলে কী? এগুলো হলো ৫ মিলিমিটার বা তার চেয়েও ছোট আকারের প্লাস্টিকের টুকরা। এগুলো এতই ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই কণাগুলো খাবার পানি, বাতাস এবং এমনকি আমরা যে খাবার খাই, তার মাধ্যমেও আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। একবার শরীরে প্রবেশ করলে, এই কণাগুলো কোষ এবং বিভিন্ন অঙ্গের ভেতরে ঢুকে যেতে পারে এবং শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব এলাকায় পানির প্রতি “বাথটাব”-এ ১০টির বেশি প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে, সেখানকার মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি। যারা কম দূষিত এলাকায় বাস করেন, তাদের তুলনায় বেশি দূষিত এলাকার মানুষের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রবণতা ১৮ শতাংশ, স্ট্রোকের ঝুঁকি ৯ শতাংশ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি ৭ শতাংশ বেশি ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিকের উৎপাদনে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থগুলোও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এই রাসায়নিকগুলো ত্বকের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, হরমোনের গোলমাল এবং কিছু ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, প্লাস্টিকের কারণে সৃষ্ট দূষণ “ক্যান্সার অ্যালে” নামে পরিচিত একটি অঞ্চলে, যেখানে পেট্রোকেমিক্যাল প্লান্টের আধিক্য রয়েছে, সেখানে রোগের প্রকোপ অনেক বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে এই গবেষণা চললেও, প্লাস্টিক দূষণ এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমাদের দেশও এর বাইরে নয়।
বাংলাদেশের নদী ও সমুদ্র উপকূলগুলোতেও প্লাস্টিকের দূষণ বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। তাই, এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
এই গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর কিছু উপায় রয়েছে। যেমন, প্লাস্টিকের পরিবর্তে স্টেইনলেস স্টিল বা কাঁচের পাত্র ব্যবহার করা, গরম খাবার বা পানীয় প্লাস্টিকের পাত্রে রাখা এড়িয়ে চলা এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ ব্যবহার করা।
এছাড়াও, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি করা এবং প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও সমুদ্র থেকে মাইক্রোপ্লাস্টিক সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করা এখনো সম্ভব নয়, তবে ব্যক্তিগত এবং সামাজিকভাবে সচেতনতা তৈরি করে এর প্রভাব কমানো যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: CNN