আতঙ্ক! সুদ কমালে কেন খারাপ হবে?

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)-এর সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা, অর্থনীতির উদ্বেগের কারণ।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) সম্ভবত চলতি বছর সুদের হার কমাতে পারে। এমনটাই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে এর পেছনে খারাপ খবর রয়েছে। মূলত, ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের উদ্বেগের কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি এবং ভোক্তাদের ব্যয়ের উপর এর প্রভাবের কারণে এমনটা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জানুয়ারি মাস থেকে, ফেড তাদের বেঞ্চমার্ক ঋণের হার প্রায় ৪.৪%-এ অপরিবর্তিত রেখেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা আগে দেখতে চান যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কসহ বিভিন্ন নীতি পরিবর্তনের প্রভাব মার্কিন অর্থনীতিতে কেমন হয়। এরপর তাঁরা সুদের হার কমানোর বিষয়ে বিবেচনা করবেন। মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনাও এই অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, ফেড সম্ভবত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সুদের হার কমানো শুরু করতে পারে। এর কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, শুল্কের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে আসবে এবং বেকারত্বের হার বাড়তে শুরু করবে। ওয়েলস ফার্গোর প্রধান অর্থনীতিবিদ জে ব্রাইসন সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন।

ফেডের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে ট্রাম্পের অসন্তুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি এর আগে ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে সুদের হার কমানোর বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য তীব্র সমালোচনা করেছেন। এমনকি তিনি পাওয়েলকে ‘বোকা’ বলেও মন্তব্য করেছেন।

ফেডের জন্য উদ্বেগের আরেকটি কারণ হতে পারে মূল্যস্ফীতি এবং স্থবির অর্থনীতির যুগপৎ উপস্থিতি। এমন পরিস্থিতিকে অর্থনীতিতে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’ বলা হয়। ফেডের কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা এখন শ্রমবাজারের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। প্ল্যান্ট মরান ফাইনান্সিয়াল অ্যাডভাইজার্সের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা জিম বেইয়ার্ড এক বিশ্লেষণে উল্লেখ করেছেন, “শ্রমবাজারে দুর্বলতা বাড়ছে। চাকরির সুযোগ কমছে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি কমেছে এবং বেকারত্বের সংখ্যাও বাড়ছে।”

ফেডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শ্রমবাজারে উদ্বেগের লক্ষণ দেখা গেলে তাঁরা সুদের হার কমিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করবেন।

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই ফেড এবং পাওয়েলকে সুদের হার দ্রুত কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, ফেড ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেয়ে পিছিয়ে আছে এবং সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে পাওয়েল ডেমোক্র্যাটদের সুবিধা করছেন। যদিও ফেড একটি স্বাধীন সংস্থা এবং এর সিদ্ধান্তগুলি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত। ট্রাম্প আরও বলেছিলেন, ফেডারেল সরকারের বিশাল বাজেট ঘাটতি কমাতে ফেডের সুদের হার কমানো উচিত।

হোয়াইট হাউসে এক বক্তৃতায় ট্রাম্প বলেছিলেন, “একজন নির্বোধের (পাওয়েল) কারণে আমরা বছরে ৬০০ বিলিয়ন ডলার খরচ করছি।”

তবে, ফেডের কর্মকর্তারা সুদের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকারের আর্থিক বিষয়গুলো বিবেচনা করেন না। তাঁদের প্রধান লক্ষ্য হল স্থিতিশীল মূল্য এবং সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।

অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারাও সম্প্রতি ফেডের সমালোচনা করেছেন। বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক গত সপ্তাহে ফক্স নিউজকে বলেন, “পাওয়েল যদি তাঁর দায়িত্ব পালন করতেন এবং সুদের হার কমাতেন, তাহলে আমরা কত অর্থ সাশ্রয় করতে পারতাম, তা ভাবা যায় না। তাঁর দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”

ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও সম্প্রতি ফেডের বিরুদ্ধে সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করার অভিযোগ করেছেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *