যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, যা যুবকদের ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখায়, সেই ‘জব কর্পস’ এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে। কম আয়ের পরিবারের তরুণ-তরুণীদের জন্য তৈরি হওয়া এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এর ফলে হাজার হাজার যুবকের জীবন কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
জব কর্পস মূলত ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের জন্য তৈরি একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে তারা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়, সেই সঙ্গে থাকার ব্যবস্থাও থাকে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে, সমাজের পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলেমেয়েরা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার সুযোগ পায়।
তবে সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই প্রোগ্রামটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর কারণ হিসেবে তারা কর্মসূচিটির কম সাফল্য এবং অতিরিক্ত খরচের কথা উল্লেখ করেছে। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে, বর্তমানে ২১,০০০ এর বেশি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী হয়তো আশ্রয়হীন হয়ে পড়বে।
ওকলাহোমার একটি জব কর্পস সেন্টারের ২১ বছর বয়সী শিক্ষার্থী নোহ বলেন, “এখানে আমার একটি থাকার জায়গা আছে, এটিই আমার জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া ছিল।” নোহের মতো অনেকেই এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে নতুন করে জীবন শুরু করার স্বপ্ন দেখছিলেন।
জব কর্পস প্রোগ্রামটি ১৯৬০ এর দশকে শুরু হয়েছিল এবং এর মাধ্যমে ২০ লক্ষাধিক যুবক-যুবতী বিভিন্ন সুযোগ পেয়েছেন। অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিও এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে তাদের শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করেছেন। এই প্রোগ্রামটি বন্ধ হয়ে গেলে, শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের জীবনই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
কর্মসূচিটি বন্ধের ঘোষণার পর, সেখানকার কর্মীরা দ্রুত আশ্রয়হীন শিক্ষার্থীদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করতে চেষ্টা করেন। কিছু শিক্ষার্থী দ্রুত তাদের প্রশিক্ষণ শেষ করার চেষ্টা করছিলেন, যাতে প্রোগ্রামটি বন্ধ হওয়ার আগেই তারা সনদপত্র পান। কিন্তু আদালতের হস্তক্ষেপে আপাতত এই কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত সেখানকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও মানসিক চাপ বিরাজ করছে।
শ্রম দপ্তর বলছে, প্রোগ্রামটির গড় উত্তীর্ণ হওয়ার হার খুবই কম, যেখানে একজন শিক্ষার্থীর জন্য বছরে প্রায় ৮০,০০০ ডলার খরচ হয়। তবে সমালোচকরা বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে অনেক কেন্দ্রে শিক্ষার্থী ভর্তি কমে গিয়েছিল, যা সাফল্যের হারে প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া, প্রোগ্রামের অভ্যন্তরীণ কিছু ঘটনাকেও তারা উদ্বেগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
তবে ট্রেড ইউনিয়নগুলো বলছে, এই প্রোগ্রামটি বন্ধ হয়ে গেলে রেলওয়ে সহ বিভিন্ন শিল্পে দক্ষ শ্রমিকের অভাব দেখা দেবে। কারণ, এই প্রোগ্রাম থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী ভালো বেতনে চাকরি করে তাদের জীবন চালাত।
বর্তমানে, ম্যানহাটানের একটি আদালত প্রোগ্রামের উপর স্থগিতাদেশের মেয়াদ ২৫ জুন পর্যন্ত বাড়িয়েছে। ফলে এর ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। এই পরিস্থিতিতে, নোহের মতো শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। তারা চান, প্রোগ্রামটি চালু থাকুক, যাতে তারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন