৮০০ শিশুর কঙ্কাল: সত্যিটা প্রকাশ করায় যারা অবিশ্বাস করেছিল!

আয়ারল্যান্ডের একটি পরিত্যক্ত মাদার অ্যান্ড বেবি হোমের নিচে প্রায় আটশো শিশুর দেহাবশেষ পাওয়ার ঘটনা সম্প্রতি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে দেশটির টুয়াম শহরে, যেখানে এককালের ‘বন সেকোর্স মাদার অ্যান্ড বেবি হোম’-এ অবিবাহিত মায়েদের গোপনে সন্তান জন্ম দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল।

স্থানীয় ইতিহাসবিদ ক্যাথরিন করলেস দীর্ঘদিন ধরে এই হোমটির নথিপত্র ঘেঁটে ১৯২৫ সাল থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে শিশুদের মৃত্যুরহস্য উন্মোচন করেন। তাঁর অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই সময়ে এখানে জন্ম নেওয়া ৭৯৬ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছিল, যাদের মধ্যে মাত্র দু’জনের মৃত্যুর সরকারি নথিপত্র ছিল।

কর্লেসের এই আবিষ্কার শুরুতে অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল। এমনকি ক্যাথলিক চার্চ, রাজনীতিবিদ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যেও অনেকে তাঁর কথা বিশ্বাস করতে চাননি। স্থানীয় অনেক মানুষজন তাঁকে এড়িয়ে চলতেন এবং তাঁর গবেষণা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করতেন।

কেউ কেউ সরাসরি তাঁকে ‘টুয়ামের দুর্নামকারী’ বলেও অভিহিত করেছেন। এমনকি সংবাদমাধ্যমেও তাঁর অনুসন্ধানের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল।

তবে করলেস দমে যাননি। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে গবেষণা চালিয়ে যান এবং ধীরে ধীরে তাঁর কাজের গুরুত্ব আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃতি লাভ করে। অবশেষে, ২০১৭ সালে সরকারি নির্দেশে খননকাজ শুরু হলে শিশুদের দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়, যা করলেসের দাবিকে সত্য প্রমাণ করে।

জানা যায় শিশুদের কঙ্কালগুলো একসময়ের সেপটিক ট্যাঙ্কের নিচে পুঁতে রাখা হয়েছিল।

শিশুদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস, অপরিণত জন্ম, হুপিং কাশি, যক্ষ্মা, মেনিনজাইটিস এবং ডিপথেরিয়ার মতো বিষয়গুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই ঘটনার পর, ২০২১ সালে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং বর্তমানে সেখানে ব্যাপক খননকাজ চলছে। এই খনন কাজের মূল উদ্দেশ্য হলো শিশুদের দেহাবশেষ শনাক্ত করা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া, যাতে তাঁরা শিশুদের যথাযথভাবে সমাধিস্থ করতে পারেন।

ঐতিহাসিক ক্যাথরিন করলেস জানিয়েছেন, তিনি এই ঘটনার শুরু থেকে শিশুদের জন্য ন্যায়বিচার চেয়েছেন। তাঁর মতে, শিশুদের এভাবে একটি নর্দমায় ফেলে রাখাটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

স্থানীয়দের একাংশ প্রথম দিকে করলেসের আবিষ্কারকে সহজভাবে নিতে পারেননি। কারণ, তাঁরা মনে করেছিলেন, তাঁদের এই ঘটনার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। তবে ঘটনার ভয়াবহতা উপলব্ধি করার পর, তাঁরা ধীরে ধীরে বিষয়টিকে মেনে নিতে শুরু করেন।

এই ঘটনাটি এখন শহরের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

তথ্য সূত্র: পিপলস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *