ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ: কী ঘটেছিল?

ইরানে সরকার পরিবর্তনের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতীত ভূমিকা

বর্তমানে ইরানকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিশেষ করে, ইসরায়েল ইরানের ওপর আক্রমণ জোরদার করার পর দেশটির সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন। এমন পরিস্থিতিতে ইরানের অতীতের একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অতীতেও যুক্তরাষ্ট্র ইরানে সরকার পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছিল।

১৯৫৩ সালে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেকের সরকারকে উৎখাত করতে সহায়তা করে। মোসাদ্দেক সরকার দেশের তেলক্ষেত্রগুলো জাতীয়করণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন, যারা মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর নির্ভরশীল ছিল, তারা এই পদক্ষেপকে তাদের স্বার্থের জন্য হুমকিস্বরূপ মনে করেছিল। মোসাদ্দেকের এই পদক্ষেপ ইরানের জনগণের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন লাভ করে এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য একটি বিজয় হিসেবে দেখা দেয়।

সরকার পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইরানের তৎকালীন শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভিকে সমর্থন করা এবং তাকে ইরানের শাসক হিসেবে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা।

এই লক্ষ্যে, সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) এবং ব্রিটিশ সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এসআইএস) মোসাদ্দেকের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের জন্য প্রচারণা চালায়। এরপর সিআইএ এবং এসআইএস শাহপন্থী শক্তিগুলোকে একত্রিত করে মোসাদ্দেকের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের আয়োজন করে, যেখানে সেনাবাহিনীর সমর্থনও ছিল।

ক্ষমতা দখলের পর নতুন প্রধানমন্ত্রী জেনারেল ফজলুল্লাহ জাহেদিকে স্থিতিশীলতা দিতে সিআইএ দ্রুত ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সরবরাহ করে। এই ঘটনার অনেক বছর পর, ২০১৩ সালে প্রকাশিত গোপন নথিতে সিআইএর এই ভূমিকার প্রমাণ পাওয়া যায়।

এমনকি ২০০৯ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই অভ্যুত্থানে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

তবে এই ঘটনার ফল ভালো হয়নি। মোসাদ্দেককে উৎখাত করার পর যুক্তরাষ্ট্র শাহকে সমর্থন অব্যাহত রাখে। কিন্তু ইরানের জনগণ বিদেশি হস্তক্ষেপকে ভালোভাবে নেয়নি।

এর ফলস্বরূপ, ইরানে মার্কিন বিরোধী মনোভাব তীব্র হয়, যা কয়েক দশক ধরে চলে আসে।

১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবে শাহ ক্ষমতাচ্যুত হন। জনগণের মধ্যে তার সরকারের দুর্নীতি এবং শাসনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল।

অন্যদিকে ইসলামপন্থীরা তার আধুনিকীকরণের ধারণার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। এই বিপ্লব ইরানের পশ্চিমা-সমর্থিত রাজতন্ত্রের অবসান ঘটায় এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সূচনা করে, যেখানে ধর্মীয় নেতাদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়, কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপের সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকতে পারে। জাতীয় স্বার্থ এবং সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে প্রতিটি দেশকে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া উচিত।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *