যুক্তরাষ্ট্রে বয়স্ক মানুষের মধ্যে অনিচ্ছাকৃতভাবে পড়ে যাওয়া দুর্ঘটনার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক সরকারি প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
২০০৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে ৬৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এই ধরনের দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ৭০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে, ৭৫ থেকে ৮৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এই হার ৭৫ শতাংশের বেশি এবং ৮৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) থেকে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে শুধুমাত্র বয়স্ক আমেরিকানদের মধ্যে, যারা অবসরের বয়সে পৌঁছেছেন, তাদের মধ্যে ৪১,০০০ এর বেশি মানুষ পড়ে গিয়ে মারা গেছেন।
এই সংখ্যাটি সত্যিই ভীতিকর। মৃতদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ছিলেন ৮৫ বছর বা তার বেশি বয়সী এবং তাদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ ছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বয়স্ক ব্যক্তিদের পড়ে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে দৃষ্টিশক্তি এবং শ্রবণশক্তির দুর্বলতা, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যা মাথা ঘোরা তৈরি করতে পারে।
তাছাড়া, বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষমতাও কমে যায়, যা তাদের জন্য ঝুঁকি বাড়ায়।
ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের গবেষক জিওফ্রে হফম্যান, যিনি এই গবেষণায় সরাসরি জড়িত ছিলেন না, তিনি বলেছেন, “পড়ে যাওয়া এখনো একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা, যা আমাদের মনোযোগের দাবিদার। এই হারগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়াটা উদ্বেগের কারণ।”
প্রতিবেদনে রাজ্য ভেদে মৃত্যুর হারের ভিন্নতাও দেখা গেছে। উদাহরণস্বরূপ, উইসকনসিনে এই হার সবচেয়ে বেশি, যেখানে আলাবামাতে সবচেয়ে কম।
শীতকালে বরফ অথবা প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে কিছু অঞ্চলে এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে থাকতে পারে। তবে, গবেষকরা বলছেন, রাজ্যগুলোর মধ্যে তথ্যের ভিন্নতা এবং মৃত্যুর কারণ হিসেবে এই ঘটনাগুলো কত ভালোভাবে নথিভুক্ত করা হয়, তার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শ্বেতাঙ্গ বয়স্কদের মধ্যে মৃত্যুর হার অন্যান্য জাতিগত গোষ্ঠীর তুলনায় বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, ৮৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের মৃত্যুর হার অন্য যেকোনো গোষ্ঠীর তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বয়স্কদের সক্রিয় থাকতে উৎসাহিত করা উচিত। নিয়মিত শরীরচর্চা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ করলে তাদের পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
যদিও এই গবেষণাটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটে করা হয়েছে, বয়স্ক ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। উন্নত জীবনযাত্রার মান এবং স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতেও এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন
