২০১৮ সালের জুন মাসে ফ্লোরিডার একটি মোটরসাইকেল ডিলারশিপের বাইরে এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তরুণ র্যাপার, জাহসেহ ডেওয়েইন রিকার্ডো ওনফ্রয়, যিনি বিশ্বজুড়ে XXXTentacion নামেই পরিচিত ছিলেন। মাত্র ২০ বছর বয়সে তার জীবনাবসান হয়, কিন্তু এর সাত বছর পরেও তার ভক্তদের মধ্যে শোক আজও বিদ্যমান।
এই প্রতিবেদনে আমরা সেই মর্মান্তিক ঘটনার বিবরণ, হত্যাকাণ্ডের কারণ এবং এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
XXXTentacion, যিনি মূলত আন্ডারগ্রাউন্ড হিপ-হপ দল ‘মেম্বারস অনলি’-র সদস্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন, মৃত্যুর আগে একক শিল্পী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতে শুরু করেন। ২০১৭ সালে তার প্রথম অ্যালবাম ‘১৭’ বিলবোর্ড ২০০-এ ২ নম্বর স্থানে ছিল, এবং পরের বছর তার দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘?’ এক নম্বরে জায়গা করে নেয়।
সঙ্গীতের জগতে তার এই দ্রুত উত্থান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
তবে, তার কর্মজীবন বিতর্ক থেকে মুক্ত ছিল না। তার বিরুদ্ধে এক গর্ভবতী নারীকে মারধর, শ্বাসরোধ করে গার্হস্থ্য নির্যাতন, মিথ্যা বন্দী করা এবং সাক্ষী-প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠেছিল।
যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং মৃত্যুর সময় সেগুলোর মীমাংসার চেষ্টা করছিলেন।
ঘটনার দিন, ২০১৮ সালের ১৮ই জুন, XXXTentacion একটি মোটরসাইকেল ডিলারশিপ থেকে বের হওয়ার সময় একটি কালো রঙের এসইউভি তার গাড়ির পথরোধ করে। ব্রাউয়ার্ড কাউন্টি শেরিফের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুইজন সশস্ত্র ব্যক্তি র্যাপারের গাড়িতে এসে তার লুই ভিটনের ব্যাগ ছিনতাই করার চেষ্টা করে।
তাদের মধ্যে একজন একাধিকবার গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই XXXTentacion-এর মৃত্যু হয়।
তদন্তে জানা যায়, ওই ব্যাগে প্রায় ৫০,০০০ মার্কিন ডলার (সে সময়ের বিনিময় হার অনুযায়ী যা ছিল প্রায় ৪২ লক্ষ টাকার সমান) ছিল। ঘটনার দিন সকালে তিনি ফ্লোরিডার কোকোনাট ক্রিক-এর একটি ব্যাংক থেকে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলেছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস পর, চারজন ব্যক্তিকে এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তারা হলেন: ডেড্রিক উইলিয়ামস, মাইকেল বোটরাইট, ট্রেভন নিউজোম এবং রবার্ট অ্যালেন।
এদের মধ্যে উইলিয়ামসকে ঘটনার দু’দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। পরবর্তীতে, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে বোটরাইট ও অ্যালেনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং আগস্ট মাসে নিউজোম আত্মসমর্পণ করেন।
মামলার শুনানিতে রবার্ট অ্যালেন দোষ স্বীকার করে এবং অন্যদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেন। তার সাক্ষ্য অনুযায়ী, তারা সবাই মিলে সেদিন ছিনতাই করার পরিকল্পনা করেছিল। তারা প্রথমে অন্য কাউকে টার্গেট করলেও পরে XXXTentacion-কে তাদের লক্ষ্যবস্তু বানায়।
বিচারে বোটরাইট, নিউজোম এবং উইলিয়ামসকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অন্যদিকে, অ্যালেনকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যদিও তিনি ইতিমধ্যে পাঁচ বছর সাজা খেটেছেন এবং তাকে ২০ বছরের জন্য প্যারোলে রাখা হয়।
XXXTentacion-এর মৃত্যুর পর, তার শেষ ইচ্ছা নিয়েও আলোচনা হয়। মৃত্যুর আগে ধারণ করা একটি ভিডিওতে তিনি বলেছিলেন, “যদি খারাপ কিছু হয়, আর আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে না পারি, তবে আমি অন্তত জানতে চাইব যে শিশুরা আমার বার্তা গ্রহণ করেছে এবং নিজেদের জীবনে কিছু করতে পেরেছে।”
তিনি আরও বলেছিলেন, তিনি তার ভক্তদের ভালোবাসেন এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
এই র্যাপারের আকস্মিক মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে তার ভক্তরা শোক প্রকাশ করে। লস অ্যাঞ্জেলেসে তার স্মরণে একটি শোকসভা অনুষ্ঠিত হয় এবং পরে ফ্লোরিডার সানরাইজে তার আনুষ্ঠানিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
মৃত্যুর সময় XXXTentacion-এর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ ছিল, যা তার সঙ্গীত জীবনের পাশাপাশি বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। মৃত্যুর পর জানা যায়, তার বান্ধবী জেনেসিস সানচেজ তার সন্তানের জন্ম দিতে চলেছেন।
২০১৯ সালের ২৬শে জানুয়ারি জন্ম হয় তাদের ছেলে গেকাইউম ওনফ্রয়ের, যার নামকরণও করে গিয়েছিলেন XXXTentacion।
আজও, XXXTentacion-এর সঙ্গীত তরুণ প্রজন্মের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তার মৃত্যু নিঃসন্দেহে হিপ-হপ জগতে একটি বিশাল শূন্যতা তৈরি করেছে, কিন্তু তার রেখে যাওয়া গানগুলো আজও মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছে।
তথ্যসূত্র: পিপলস